Site icon World 24 News Network

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বাংলায় ১৮তম ভাষণে প্রধানমন্ত্রী

সংগৃহীত

মহামারি মোকাবেলায় জরুরি ভিত্তিতে টিকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করার জোরালো দাবি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে টিকাবৈষম্য বাড়তে দেখেছি। বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, এযাবৎ উৎপাদিত টিকার ৮৪ শতাংশ উচ্চ ও উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মানুষের কাছে পৌঁছেছে। অন্যদিকে নিম্ন আয়ের দেশগুলো ১ শতাংশেরও কম টিকা পেয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে এ টিকাবৈষম্য দূর করতে হবে। লাখ লাখ মানুষকে টিকা থেকে দূরে রেখে কখনোই টেকসই পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। আমরা পুরোপুরি নিরাপদও থাকতে পারব না।’

শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে কভিডের টিকা উন্মুক্ত করার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, প্রযুক্তি সহায়তা ও মেধাস্বত্বে ছাড় পেলে বাংলাদেশও ব্যাপক পরিমাণে টিকা তৈরি করতে সক্ষম। কভিড মোকাবেলায় বাংলাদেশের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৃণমূল থেকে শক্তিশালী স্বাস্থ্যব্যবস্থার কারণে করোনার প্রকোপ আশঙ্কার চেয়ে কম হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনের উচ্চ পর্যায়ের বিতর্কে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের কাছে এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেওয়ার সময় সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে সভাপতির আসনে ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা।

শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে বিশ্বের জন্য ছয় দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন। কভিডমুক্ত বিশ্ব গড়তে তিনি টিকার সর্বজনীন ও সাশ্রয়ী মূল্যে প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার প্রস্তাব দিয়েছেন। দ্বিতীয় প্রস্তাবে তিনি ধনী ও শিল্পোন্নত দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণ হ্রাস, ক্ষতিপূরণ এবং টেকসই অভিযোজনে অর্থায়ন ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের ওপর জোর দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর তৃতীয় প্রস্তাবে করোনায় শিক্ষা খাতের বিপর্যয়ের কথা তুলে ধরেন এবং বিপর্যস্ত শিক্ষাব্যবস্থাকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তার জন্য ডিজিটাল সরঞ্জামাদি ও সেবা, ইন্টারনেট ও শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। চতুর্থ প্রস্তাবে তিনি স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পথে থাকা বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য আরো প্রণোদনাভিত্তিক কাঠামো সৃষ্টির ওপর জোর দিয়েছেন। কভিডে ক্ষতিগ্রস্ত অভিবাসী কর্মীদের কল্যাণ নিশ্চিত করার কথা আছে প্রধানমন্ত্রীর পঞ্চম প্রস্তাবে। ষষ্ঠ প্রস্তাবে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বিশ্বসম্প্রদায়ের জোরালো ভূমিকা ও সহযোগিতার তাগিদ দিয়েছেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী এবার নিয়ে ১৭ বার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছেন। তিনি তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেখানো পথে বরাবরের মতো এবারও সাধারণ পরিষদে ভাষণ দিয়েছেন মাতৃভাষা বাংলায়।

কভিড মহামারিতে বিশ্বজুড়ে অব্যাহত মৃত্যু, কভিডের নতুন নতুন ধরনের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে বারবার সংক্রমণ এবং সারা বিশ্বের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও অর্থনীতিতে বিপর্যয়ের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। ভাষণের শুরুতেই তিনি এ সংকটকালে নিবেদিত সেবা ও আত্মত্যাগের জন্য সম্মুখ সারির সব যোদ্ধার প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বহুপাক্ষিকতাবাদ ও জাতিসংঘ ব্যবস্থার দৃঢ় সমর্থক হিসেবে বাংলাদেশ এই সংকটকালে জাতিসংঘকে আশা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে দেখে। সব ধরনের মতভেদ ভুলে গিয়ে আমাদের অবশ্যই ‘অভিন্ন মানবজাতি’ হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াতে হবে; সম্মিলিত শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সবার জন্য আবারও এক সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়ে তুলতে হবে।”

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপনের এই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বছরে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে তাঁর ভাষণে স্বপ্নের স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধুর আজীবন নিঃস্বার্থ সংগ্রাম ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কথা স্মরণ করেন। তিনি শ্রদ্ধা জানান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন বহুপাক্ষিকতাবাদের একজন দৃঢ় সমর্থক। তিনি জাতিসংঘকে জনগণের ‘আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্র’ মনে করতেন। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের একাংশ উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অর্থনৈতিক বৈষম্য, সামাজিক অবিচার, আগ্রাসন ও পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি থাকবে না ৪৭ বছর আগের বঙ্গবন্ধুর সেই আহ্বান আজও সমানভাবে প্রযোজ্য। এ জন্য আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক সমাজ গঠনের যেকোনো উদ্যোগে সমর্থন ও নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের টিকার ন্যায্য হিস্যা দাবি, ফিলিস্তিনিদের প্রতি যেকোনো ধরনের অবিচারের বিরুদ্ধে আমাদের দৃঢ় অবস্থান, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা—এসব আমাদের বৈশ্বিক অঙ্গীকারের কতিপয় উদাহরণ মাত্র।’ তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অপূর্ণ স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করার পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে এযাবৎ অগ্রগতির তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল পাঁচটি অর্থনীতির মধ্যে অন্যতম। জিডিপিতে আমরা বিশ্বের ৪১তম। গত এক দশকে আমরা দারিদ্র্যের হার ৩১.৫ থেকে ২০.৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি, এক দশকে আর্থ-সামাজিক খাতে ও নারীর ক্ষমতায়নে অভাবনীয় সাফল্য, শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস এবং গড় আয়ু বৃদ্ধির তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের তথ্য মতে, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। ২০১৪ সাল থেকে এ সূচকে বাংলাদেশ আঞ্চলিক প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে আছে।’

শেখ হাসিনা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ উদ্যোগের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষা, দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়নসহ অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাড়া জাগার কথা জানান। তিনি ব্যাপকভাবে ‘সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী’ কর্মসূচির সম্প্রসারণের তথ্যও তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ বছর আমরা স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের মাইলফলক অর্জন করেছি। এখন আমাদের স্বপ্ন বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি জ্ঞানভিত্তিক উন্নত দেশ এবং ২১০০ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ ও টেকসই বদ্বীপে রূপান্তর করা।’

করোনা মহামারি মোকাবেলায় সময়োচিত, সমন্বিত ও বহুমুখী উদ্যোগ কার্যকর ভূমিকা রেখেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জীবন ও জীবিকার ভারসাম্য রক্ষা করতে শুরুতে আমাদের বেশ কিছু কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। অর্থনীতিকে সচল রাখতে বিভিন্ন সময়ে আমরা ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে প্রায় এক হাজার ৪৬০ কোটি মার্কিন ডলার বরাদ্দ দিয়েছি, যা মোট দেশজ উৎপাদনের ৪.৪৪ শতাংশ। করোনার টিকা সংগ্রহের জন্য চলতি অর্থবছরে বাজেটে ১৬১ কোটি মার্কিন ডলারের সংস্থান রাখা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী অতিদরিদ্র, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন, বিদেশফেরত প্রবাসী ও অসহায় নারীদের মতো সমাজের দুর্বলতর জনগোষ্ঠীর জন্য পর্যাপ্ত উদ্যোগ গ্রহণ, গত বছর মহামারির প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে প্রায় চার কোটি মানুষকে নগদ অর্থসহ অন্যান্য সহায়তা দেওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘সময়োচিত পদক্ষেপ ও আমাদের জনগণের বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলার সক্ষমতার কারণে ২০২০ সালেও আমরা ৫ শতাংশের বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও করোনা মহামারি আরো বেশ কিছুদিন স্থায়ী হবে বলে মনে হচ্ছে। সে জন্য এ অভিন্ন শত্রুকে মোকাবেলা করার জন্য অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন আমাদের অনেক বেশি নতুন, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বৈশ্বিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, গত বছর সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তিনি কভিড-১৯ টিকাকে ‘বৈশ্বিক সম্পদ’ হিসেবে বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। বিশ্বনেতাদের অনেকে তখন এ বিষয়ে সহমত পোষণ করেছিলেন। সেই আবেদনে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। তিনি বৈশ্বিক সংহতি ও সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘সর্বজনীন বিষয়গুলোতে আমাদের অবশ্যই একসঙ্গে কাজ করতে হবে। নতুন নতুন অংশীদারি ও সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হবে। সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে বিভিন্ন অঞ্চলের সদস্য দেশগুলো এই জাতিসংঘের মঞ্চ থেকেই তা শুরু করতে পারে। তবেই আমরা সহনশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উত্তরণের লক্ষ্যে একটি অর্থবহ সহযোগিতা অর্জন করতে পারব।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আবারও আহ্বান জানাচ্ছি, সবার জন্য ন্যায়সংগত ও সাশ্রয়ী মূল্যে টিকার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। অবিলম্বে টিকা প্রযুক্তি হস্তান্তর টিকার সমতা নিশ্চিত করার একটি উপায় হতে পারে।’

শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর পক্ষে কথা বলেন। তিনি বলেন, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে জলবায়ু পরিবর্তনের ধ্বংসাত্মক প্রভাব কাটিয়ে ওঠা কঠিন হবে। ধনী অথবা দরিদ্র—কোনো দেশই এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া থেকে নিরাপদ নয়। তিনি ধনী ও শিল্পোন্নত দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস, নিঃসরণের জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং টেকসই অভিযোজনের জন্য অর্থায়ন ও প্রযুক্তির অবাধ হস্তান্তরের আহ্বান জানান। এ ছাড়া তিনি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় গ্লাসগোতে অনুষ্ঠেয়  ‘কনফারেন্স অব পার্টিজের’ ২৬তম শীর্ষ সম্মেলনকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট এবার পঞ্চম বছরে পড়ল, কিন্তু এখন পর্যন্ত বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের একজনকেও ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। মিয়ানমারে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে অনিশ্চয়তা তৈরি হলেও এ সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করতে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জোরালো ভূমিকা ও অব্যাহত সহযোগিতা আশা করি।’ তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারকে অবশ্যই তার নাগরিকদের প্রত্যাবর্তনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সহযোগিতা করতে সদা প্রস্তুত।’

রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে সাময়িক অবস্থানকে নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখতে কিছু রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর, রোহিঙ্গাদের কভিড টিকাদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগেও বলেছি, আবারও বলছি, রোহিঙ্গা সংকটের সৃষ্টি মিয়ানমারে, সমাধানও রয়েছে মিয়ানমারে। রাখাইন রাজ্যে তাদের মাতৃভূমিতে নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমেই কেবল এ সংকটের স্থায়ী সমাধান হতে পারে। এ জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই গঠনমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা একটি শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ দক্ষিণ এশিয়ার স্বপ্ন দেখি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে আফগানিস্তানের বিনির্মাণ এবং ভবিষ্যতের গতিপথ নির্ধারণ সে দেশের জনগণের ওপরই নির্ভর করে। আফগানিস্তানের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য দেশটির জনগণ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করে যেতে বাংলাদেশ সদা প্রস্তুত।’

প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস ও সহিংসতার বিরুদ্ধে এবং শান্তির পক্ষে বাংলাদেশের জোরালো অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘শীর্ষস্থানীয় শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বৈশ্বিক শান্তি রক্ষায় অবদানের জন্য আজ আমরা গর্ববোধ করি। মহামারির নজিরবিহীন প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমাদের শান্তিরক্ষীরা বিশ্বজুড়ে কঠিনতম পরিবেশে নিষ্ঠা ও পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বজায় রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার কথা আসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার শেষাংশে। তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বে শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার এই মহান সংস্থার সামনে প্রায় ৪৬ বছর আগে আমার পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যার ন্যায়বিচার পাওয়ার প্রত্যাশার কথা তুলে ধরতে চাই।’

বিদেশে থাকায় বেঁচে যাওয়া, ছয় বছর দেশে ফিরতে না পারা এবং নির্বাসিত জীবনযাপনের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশে ফিরে আমি মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম শুরু করি। জাতির পিতার স্বপ্ন সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য আজও আমি কাজ করে যাচ্ছি।’ যত দিন বেঁচে থাকবেন তত দিন মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন তিনি।

Exit mobile version