Site icon World 24 News Network

মিশরে বাংলাদেশী শ্রমবাজার উন্মুক্ত করতে কাজ করছে কায়রো দূতাবাস

কায়রো দূতাবাসের কাউন্সেলর (শ্রম) মোহাম্মদ ইসমাইল হুসাইন

১৮ ডিসেম্বর ছিল আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ২০০০ সালের ৪ ডিসেম্বর দিনটি বিশ্বব্যাপী উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। তখন থেকে প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবারও বাংলাদেশ দূতাবাসসহ প্রবাসীরা দিবসটি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে পালন করেন। দিবসটি উপলক্ষে মিশরের বাংলাদেশ দূতাবাস সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠান আয়োজন করে। নিচের সাক্ষাৎকারটি এসব আয়োজনের একটি ।

জাগো নিউজ: মিশরে বাংলাদেশ দূতাবাসের অভিবাসী দিবসের অনুষ্ঠান কেমন হলো?

ইসমাইল হুসাইন: অনুষ্ঠানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সরব উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ১৮-২৪ ডিসেম্বর অভিবাসী সপ্তাহ উদযাপনসহ মূল অনুষ্ঠান শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

জাগো নিউজ: মিশরে কতজন রেমিট্যান্সযোদ্ধা রয়েছেন? প্রবাসীদের জন্য দূতাবাস কেমন সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে।

ইসমাইল হুসাইন: বর্তমানে মিশরে প্রায় ১৫ হাজার রেমিট্যান্সযোদ্ধা আছেন। এদেশের শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ, কূটনৈতিক সম্পর্ক, প্রবাসীদের ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধিসহ ভিসা নবায়ন ফি কমিয়ে আনার প্রচেষ্টা চলছে। এছাড়া প্রবাসীদের কর্মস্থল, আবাসস্থল পরিদর্শন করে কারখানার মালিকপক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং কর্মীদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ইতিবাচক ভূমিকা পালনসহ প্রবাসীদের জীবনমান উন্নয়নে নিয়মিত কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দূতাবাস।

জাগো নিউজ: রাজধানী কায়রো ছাড়াও আলেক্সজান্দ্রিয়া, পোর্টসাইদ, ইসমাইলিয়া, ১০ রমাদান শহরের পোশাক শিল্পে কর্মরতরা কেমন সেবা পাচ্ছেন?

ইসমাইল হুসাইন: মিশরপ্রবাসী বাংলাদেশিদের অধিকাংশ আলেক্সজান্দ্রিয়া, পোর্টসাইদ, ইসমাইলিয়া, ১০ রমাদান শহরে থাকেন। তাদের ট্রাভেল পারমিট, পাসপোর্ট ইস্যু, ভিসা নবায়নের জন্য দূতাবাসের পক্ষ থেকে শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সহযোগিতা করা হয়।

জাগো নিউজ: নতুন শ্রমবাজার তৈরিতে বিশেষ কোনো উদ্যোগ আছে কি না?

ইসমাইল হুসাইন: মিশরে শ্রমবাজার বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এদেশে মন্ত্রীসহ শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়মিত বৈঠক হয়। বৈঠকে প্রবাসী কর্মীদের দক্ষতাবিষয়ক কাজ করা হয়। বর্তমানে মিশরে বেকার সমস্যা প্রকট। বিদেশি কর্মীদের বিষয়ে তাদের আগ্রহ কিছুটা কমেছে। সম্প্রতি চল্লিশজন বাংলাদেশি শ্রমিক ভিসায় মিশর এসেছেন। আশা করি ভবিষ্যতে শ্রমবাজার আরও উন্মুক্ত হবে।

জাগো নিউজ: পোশাক শিল্প ছাড়া কৃষিখাতে বাংলাদেশি শ্রমিকের চাহিদা কেমন?

ইসমাইল হুসাইন: পোশাক শিল্প ব্যতীত অন্যান্য পেশায় কাজের সুযোগ রয়েছে। কৃষিখাতেও সম্ভাবনা রয়েছে। ইদানীং কয়েকজন বাংলাদেশি কৃষি খামার তৈরি করে কাজ করছেন। উৎপাদিত কৃষিপণ্য তারা ইউরোপেও রপ্তানি করেন। নিজস্ব উদ্যোগে কৃষি খামার বৃদ্ধির মাধ্যমে শ্রমবাজার বৃদ্ধি পেতে পারে।

জাগো নিউজ: মিশরে কোন কোন পেশায় বাংলাদেশের দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকের চাহিদা বেশি? নতুনভাবে শ্রমিক নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা আছে কী?

ইসমাইল হুসাইন: মিশরে গার্মেন্ট সেক্টরে বাংলাদেশের দক্ষ কর্মীর চাহিদা সব থেকে বেশি। নতুনভাবে কর্মী নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত।

জাগো নিউজ: মিশরপ্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ভিসাবিষয়ক কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে? ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা অবসানে দূতাবাসের উদ্যোগ কেমন?

ইসমাইল হুসাইন: মিশরপ্রবাসী বাংলাদেশিদের ভিসা নবায়ন করার ক্ষেত্রে দূতাবাস থেকে শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রণালয়ে প্রবাসীদের আবেদনের ফলে পত্র দেওয়া হয়। ভিসা নবায়ন ফি কমানোর বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি।

জাগো নিউজ: মিশরপ্রবাসী বাংলাদেশিদের কল্যাণে দূতাবাসের কর্মসূচি কী?

ইসমাইল হুসাইন: মিশরপ্রবাসী বাংলাদেশিদের কল্যাণে দূতাবাস সর্বদা কাজ করে যাচ্ছে। তাদের যেকোনো সমস্যা সমাধানে ত্বড়িত পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

জাগো নিউজ: ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্যপদ বাড়ানোর কোনো কার্যক্রম রয়েছে কী? সদস্য পদের সুবিধাগুলো কী কী?

ইসমাইল হুসাইন: বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্যপদ বাড়ানোর কার্যক্রম চলমান। সদস্যপদের সুবিধাসমূহ নিম্নরূপ:

বিমানবন্দরে প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কের মাধ্যমে কর্মীদের নিরাপদে বিদেশ গমন ও প্রত্যাবর্তনে সহায়তা দেওয়া, প্রবাসী কর্মীর মেধাবী সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা, দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসী কর্মীদের আইনগত সহায়তা দেওয়া, প্রবাসে আটকেপড়া কর্মীদের মুক্তকরণসহ দেশে ফেরত আনা, পঙ্গু ও অসুস্থ কর্মীদের আর্থিক সাহায্য করা, প্রবাসে অসুস্থ/মৃত কর্মীদের পরিবহনে বিমানবন্দর থেকে অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা দেওয়া, বিমানবন্দর থেকে মৃতের স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর ও খরচ বাবদ ৩৫ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়া।

এছাড়াও বৈধভাবে বিদেশ যাওয়া মৃত কর্মীর পরিবারকে ৩ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান দেওয়া। মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ/ইন্স্যুরেন্স/বকেয়া বেতন/সার্ভিস বেনিফিট আদায় এবং ওয়ারিশদের কাছে হস্তান্তর করা। কর্মীদের সম্পদ রক্ষা এবং নানাবিধ অসুবিধা দূরীকরণে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে সহায়তা দেওয়া, প্রবাসী কর্মীর পরিবারকে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস এবং প্রবাসী কল্যাণ শাখার মাধ্যমে সেবা দেওয়া, প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে হাউজ লোন, পেনশন স্কিম এবং ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীর পুনর্বাসনে অন্তর্ভুক্ত করা।

জাগো নিউজ: করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। মিশরে মার্কিন ডলারের বিপরীতে মিশরীয় পাউন্ডের আকাশচুম্বী দরপতন, এতে প্রবাসীদের জীবনে কী প্রভাব পড়ছে?

ইসমাইল হুসাইন: কিছু প্রবাসী কর্মী আমাদের জানিয়েছেন, তাদের বেতন কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষ প্রবাসীদের চাকরিচ্যুতির বিষয়েও শুনেছি। আমরা কোম্পানির মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করছি। প্রয়োজনে কোম্পানি পরিবর্তন করে দেওয়া হচ্ছে।

জাগো নিউজ: মিশরে বাংলাদেশ দূতাবাস একটি কবরস্থানের জন্য জমি কিনেছে। এ পর্যন্ত কতজন প্রবাসীকে সমাহিত করা হয়েছে? মরদেহ দাফন করার নিয়ম-কানুন কী?

ইসমাইল হুসাইন: কবরস্থানে এরই মধ্যে দুইজন প্রবাসী বাংলাদেশির মরদেহ দাফন করা হয়েছে। বাংলাদেশিরা তার পরিবারের কোনো সদস্যের মরদেহ দাফন করতে চাইলে রাষ্ট্রদূতের কাছে লিখিত আবেদনের মাধ্যমে অনুমতি নিতে হয়।

জাগো নিউজ: বিদেশে মরদেহ দাফন করলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ঘোষিত তিন লাখ ৩৫ হাজার টাকা মৃত প্রবাসীর পরিবারের পাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু?

ইসমাইল হুসাইন: প্রবাসে মৃত বাংলাদেশি কর্মীর মরদেহ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে সবার ক্ষেত্রে দাফন বাবদ ৩৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। বৈধ কর্মী হলে মৃতের পরিবারকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে তিন লাখ টাকা দেওয়া হয়।

জাগো নিউজ: জাগো নিউজকে মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

ইসমাইল হুসাইন: জাগো নিউজকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

Exit mobile version