মিশরের জীবনে প্রথম সফর তূর পাহাড় ও শারম আল শাইখ

একদিন হঠাৎ করে শুনলাম যে, “বাংলাদেশ স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন” এর পক্ষ হতে একটি রিহলা (শিক্ষাসফর) হতে পারে। জিজ্ঞাসা করলাম রিহলা কোথায়? উত্তরে যখন শুনলাম যে, ভ্রমনটি হবে ‘তূরে সিনা’… নামটি শোনামাত্র আমার ভিতরে এক অদ্ভুত কম্পন সৃষ্টি হলো। তারপর সেই রিহলার সাথে থাকার জন্য মনে খুব আবেগ বেড়ে গেল। সবার আগে লাফিয়ে বললাম আমিও যাব ইনাশআল্লাহ !
কিন্তু তার পরক্ষণেই শুনলাম যে, সেখানে যেতে নাকি অবশ্যই সবার পাসপোর্টে ভিসা থাকাটা আবশ্যক। পথে পথে চরম চেকপোস্ট বিরাজমান। আহা! কি আর করার মনটা হঠাৎ করেই অনুরুপভাবে খারাপ হয়ে গেল। কেননা, অফিসিয়ালি কিছু জটিলতার কারণে আমাদের নতুন কয়েকজন ছাত্রের ভিসা ছিল না। খুব আফসোস করলাম এবং আর এটা ভেবে নিলাম যে, তাহলে আর যাওয়া হচ্ছে না।
 
কিন্তু, আলহামদুলিল্লাহ্‌ তারই কিছুদিন পর শুনলাম যে, যাদের ভিসা নেই, তাদেরকে নেয়া হবে। পথে যাতে কোন সমস্যা না হয় এজন্য আমরা পুলিশের অনুমতি নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি। দোয়া করতে থাকেন।
শুনে মহান আল্লাহ পাকের কাছে অধির আগ্রহে দোয়া করতে থাকলাম।
আলহামদুলিল্লাহ্‌ ! ফলস্বরুপ শেষ পর্যায়ে যাওয়াটা নিশ্চিত হল।
বাড়িতে ফোন করে আম্মা-আব্বাকে বিষয়টি জানালাম এবং তাদের থেকে দু’আ চাইলাম। তারা শুনে খুব খুশি হলেন এবং সফর কামিয়াব হওয়ার জন্য অনেক দু’আ করলেন।
তারপর থেকে সফরের প্রস্তুতি-স্বরুপ একজন বড়ভাই তথা ইব্রাহিম ভাইকে সাথে নিয়ে কিছু কেনাকাটা শেষ করলাম। যিনি আমার শিক্ষকও বটে। যার কথা না বললেই নয়।
 
 
 
 
আমাদের সফর শুরু হওয়ার নির্ধারিত সময় ছিল, ০৯-০৩-২০১৭ ইং তারিখ বুধবার দিবাগত রাত ৪.০০ টায়। অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে।
গাড়ি ছাড়বে আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী বিশাল ছাত্রাবাস মদিনাতুল বু’উসের পাশে অবস্থিত তাকী’র মোড় থেকে।
সফরের পূর্বে যারা আগে এই পুণ্যভূমি যিয়ারত করেছেন, তাদের থেকে পরামর্শ নিলাম কী কী সাথে নেওয়া যায়। তারা বললেন, বেশি করে পানি, ফল ও ফলের জুস সাথে নিবেন এবং শীতের পোশাক ও ভাল জুতা (কেডস) নেওয়ার কথাও বললেন। তাদের পরামর্শে সেভাবেই প্রস্তুতি নিলাম। এরপর আল্লাহর উপর ভরসা করে দুই রা’কাত নামায আদায় করে একটু আগেভাগেই প্রস্তুতি শেষ করলাম।
কিন্তু, নির্ধারিত সময় চারটা গড়িয়ে এক সময় পাঁচটা হয়ে গেল। এখনও সফরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গাড়িতে উঠানো হয়নি।সেই জন্য আমরাও একাজে হাত বাড়িয়ে দিলাম। যাই হোক অবশেষে তাকী মসজিদে সবাই ফজরের নামাজটি পড়েই রওনা করলাম এবং মহান আল্লাহ তা’য়ালার শুকরিয়া আদায় করতে থাকলাম।
 
শুরু হল তূরে সিনার উদ্দেশ্যে সফর। আমাদের বাস সংখ্যা ছিল দুইটি। লোক সংখ্যা ছিল প্রায় ১০০ জনের মত। সাথে ছিলেন প্রবাসী কিছু পরিবার ও মিশরস্থ বাংলাদেশ এ্যাম্বাসির জুবাইদা ম্যাডামসহ তার পরিবার এবং আরও অনেকে ।
 
সেই প্রাচীন কাল থেকেই মিসর সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি হিসাবে স্বীকৃত। যুগে যুগে দর্শনার্থীদের বিচরণভূমি হিসাবে পরিচিত। বর্তমানে পর্যটন খাতটি মিশরের অর্থনীতি সচল রাখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তাই এখানে পর্যটকদের সব ধরনের সু-ব্যবস্থা রয়েছে।
 
কি যে আনন্দ লাগছিল! কেননা, অন্য কোন একটি রাষ্ট্রে আমরা এতগুলো বাংগালী একসাথে নতুন এক জায়গা দেখতে যাচ্ছি। যা সত্যিই মহা আনন্দের ছিল। আমার মনে হচ্ছিল যেন আমরা সবাই কতই না আপন। কেননা, মিশরে পথেঘাটে সব জায়গায় আরবী শুনি বা বিভিন্ন দেশের বিদেশী ছাত্রদের তাদের নিজস্ব ভাষা কানে বাজে।
 
কিন্তু, নিজের মাতৃভাষা সবচাইতে সুমধুর লাগে। আর আমরা একই ভাষাভাষী এতজন একসাথে….!
 
তাইতো ভাষার বিভিন্নতা মানুষকে আরো কাছে টেনে নেয়। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, অনুবাদ বলছি শুধু-
“হে মানব সম্প্রদায়, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা একে অন্যকে চিনতে পার। প্রকৃতপক্ষে তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা বেশি মর্যাদাবান সেই, যে আল্লাহ তা’আলাকে বেশি ভয় করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা সবকিছু জানেন, সবকিছু সম্পর্কে অবহিত।”
সূরা হুজুরাত (৪৯) : ১৩
 
কায়রো থেকে তূরে সিনা যাওয়ার দুইটা পথ। একটা পথ হল সোজা। সোজা পথটির দূরত্ব কায়রো থেকে তুরে সিনা ৪৩০ কিলোমিটার। অন্যটি হল, প্রথমে কায়রো থেকে শারমুশ শাইখ ৫৩৫ কিলোমিটার। শারমুশ শাইখ থেকে তুরে সিনা ২০৫ কিলোমিটার। মোট ৭৪০ কিলোমিটার। আমরা প্রথম পথটি অনুসরণ করেছিলাম। গাড়ি ছাড়ার পর থেকে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দুয়া করতে থাকলাম, হে আল্লাহ! তুমি আমাদের সফরকে সহজ করে দাও। তুমি যেটা পছন্দ কর সফর যেন সেই উদ্দেশ্যে হয়।
মূসা আলাইহিস সালামের সম্পর্কে কুরআনে যে আয়াতগুলো নাযিল হয়েছে তার কিছু কিছু পড়েছিলাম আর পথে সেগুলো চিন্তা ভাবনা করছিলাম।
কুরআনে মূসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে অনেক আলোচনা করা হয়েছে। অনেক উপমা ও বিভিন্ন আঙ্গিকে তাঁর ঘটনা বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। যাতে মানুষ এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
একটি আয়াত-তার তরজমা হল-
“মূসা যখন মেয়াদ পূর্ণ করল এবং নিজ স্ত্রীকে নিয়ে রওয়ানা হয়ে গেল, তখন সে তুর পাহড়ের দিকে এক আগুন দেখতে পেল। সে নিজ পরিবারবর্গকে বলল, তোমরা অপেক্ষা কর। আমি এক আগুন দেখেছি, হয়ত আমি সেখান থেকে তোমাদের কাছে আনতে পারব কোনো সংবাদ অথবা আগুনের একটা জ্বলন্ত কাঠ, যাতে তোমরা উত্তাপ গ্রহণ করতে পার। সুতরাং সে যখন আগুনের কাছে পৌঁছল, তখন ডান উপত্যকার কিনারায় অবস্থিত বরকতপূর্ণ ভূমির একটি বৃক্ষ থেকে ডাকা হল, হে মূসা! আমিই আল্লাহ, জগৎসমূহের প্রতিপালক। -সূরা কাসাস (২৮) ২৯-৩০
 
এই পাহাড়ে মূসা আলাইহিস সালাম তাওরাত লাভ করেছিলেন। মহান আল্লাহ তাআলা সূরা আ‘রাফে তা উল্লেখ করেছেন- যার অনুবাদ হল-
” আমি মূসার জন্য ত্রিশ রাতের মেয়াদ স্থির করেছিলাম (যে, এ রাতসমূহে তুর পাহাড়ে এসে ই’তিকাফ করবে)। তারপর আরও দশ রাত বৃদ্ধি করে তা পূর্ণ করি। এভাবে তার প্রতিপালকের নির্ধারিত মেয়াদ চল্লিশ দিন হয়ে গেল এবং মূসা তার ভাই হারুনকে বলল, আমার অনুপস্থিতিতে তুমি সম্প্রদায়ের মধ্যে আমার প্রতিনিধিত্ব করবে, সবকিছু ঠিকঠাক রাখবে এবং অশান্তি সৃষ্টিকারীদের অনুসরণ করবে না। মূসা (আ.) যখন আমার নির্ধারিত সময়ে এসে পৌঁছল এবং তার প্রতিপালক তাঁর সাথে কথা বললেন, তখন সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দর্শন দিন আমি আপনাকে দেখব। তিনি বললেন, তুমি আমাকে কিছুতেই দেখতে পাবে না। তুমি বরং পাহাড়ের প্রতি দৃষ্টিপাত কর। তা যদি আপন স্থানে স্থির থাকে, তবে তুমি আমাকে দেখতে পারবে। অতপর যখন তার প্রতিপালক পাহাড়ে তাজাল্লী ফেললেন ( জ্যোতি প্রকাশ করলেন) তখন তা পাহাড়কে চূর্ণ-বিচুর্ণ করে ফেলল এবং মূসা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে গেল। পরে যখন তার সংজ্ঞা ফিরে আসল, তখন সে বলল, আপনার সত্তা পবিত্র। আমি আপনার দরবারে তওবা করছি এবং (দুনিয়ায় কেউ আপনাকে দেখতে সক্ষম নয়- এ বিষয়ের প্রতি) আমি সবার আগে ঈমান আনছি।” -সূরা আ‘রাফ (৭) : ১৪২-১৪৩
 
গাড়ি শোঁ শোঁ করে সামনের দিকে ছুটে চলেছে। জানালার ফাঁক দিয়ে বাইরের পরিবেশটা উপভোগ করতে চেষ্টা করলাম।
আর এদিকে আমাদের গাড়ির ভিতরে ধাপে ধাপে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছিল। ক্বারীর ক্বেরাত, শিল্পীর গান, কৌতুক, ধাঁধাঁ, ওয়াজ,  লেকচার, কাশেম টিভিতে সাংবাদিকদের বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানীগুণীদের সাক্ষাৎকার পর্ব আরো ইত্যাদির মধ্য দিয়ে চলছিল যেন সফরটাকে আরো আনন্দদায়ক করার প্রচেষ্টা।
 
একসময় গাড়ি আমাদের নিয়ে প্রসিদ্ধ সুয়েজ ক্যানেলের কাছে পৌঁছল। গাড়ির দায়িত্বশীল আমাদেরকে জানালেন যে, এটাই সেই প্রসিদ্ধ সুড়ঙ্গ পথ। এই সুড়ঙ্গ পথটির নামকরণ করা হয়েছে শহীদ আহমদ হামদীর নামে। এই ব্যক্তি মিশরের তৎকালীন সেনাবাহিনীর একজন কর্ণেল ছিলেন। ১৯৭৩ সালে মিশর ও ইসরাঈলের সাথে যে যুদ্ধ হয়েছিল, তাতে তিনি শহীদ হন। যুদ্ধে শহীদ আহমাদ হামদীর বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার স্মৃতি স্বরূপ তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সাদাত এর নামকরণ করেন শহীদ আহমাদ হামদী ক্যানেল। আফ্রিকা ও এশিয়া সংযোগ স্থাপনকারী এই সুড়ঙ্গটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ইসরাঈলের সাথে শান্তি প্রক্রিয়া চালু হলে । এটা সুয়েজ খালের তলদেশ দিয়ে অতিক্রমের দ্বিতীয় পথ। কায়রো থেকে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই সুড়ঙ্গ পথটি সিনাই উপদ্বীপের সাথে সুয়েজ শহরসহ মিশরের বাকি অংশের সাথে সংযোগ সৃষ্টি করেছে। প্রতিদিন প্রায় বিশ হাজারেরও অধিক গাড়ি পার হয় এই সুড়ঙ্গ পথ দিয়ে। এটা নির্মাণের অন্যতম উদ্দেশ্য হল পর্যটন বিকাশ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। নির্মাণে ইউরোপীয় দেশগুলো অংশ নেয়। একটি বৃটিশ কোম্পানীর পরিকল্পনা মোতাবেক আরব ঠিকাদার কোম্পানি এর নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করে। সুড়ঙ্গ পথটি চালু করার পর ফাটল দেখা দিলে জাপানের এক কোম্পানীর মাধ্যমে তা মেরামত করা হয়। সুড়ঙ্গ পথটি লম্বায় ৫৯১২ মিটার। পশ্চিমের অনুপ্রবেশদ্বার থেকে ১৯৮৪ মিটার, মাঝখানে ১৬৪০ মিটার। এই সুড়ঙ্গটা অনেক সুন্দর। এটা দেখার জন্য অনেক পর্যটক আসে। আমরা মাত্র কয়েক মিনিট চলন্ত গাড়ি থেকে দেখেছি।
 
এক যাত্রাবিরতিতে গাড়ি থামল। সবাই গাড়ি থেকে নেমে অনেকে হাম্মামে গেল, এদিকে অনেকে সেলফি তোলা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। বিরতি শেষে গাড়ি পুনরায় ছেড়ে দিল।
 
তারপর আমরা সেখান থেকে উয়্যুনে মুসা অর্থাৎ মুসা (আ.) এর স্মৃতি বিজড়িত কূপের নিকট গিয়ে উপস্থিত হলাম। যা সূরা কাসাসে বিস্তারিতভাবে বলা আছে ।
তারপর সেখানেই আমরা পরিদর্শন শেষে সকালের নাস্তা করি। অত:পর সে স্থান ত্যাগ করে তূরে সিনার দিকে ছুটলাম।
প্রত্যেকবার গাড়ি ছাড়ার সময় নতুন করে সফরের দুয়াগুলো পড়ে নিচ্ছিলাম। আমার মনে হল, এক সফরে কয়েকটি সফর করছি। আর হায়াত মউতের সময়তো কারো জানা নেই। তাই প্রত্যেকবার নতুন করে মউতের প্রস্তুতি নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম।
মুসাফিরের দিল থাকে কোমল, চোখ থাকে সজল, আর কোমল অন্তর ও সজল চোখ আল্লাহর প্রিয়। মনে হচ্ছিল যেন মিশরের আলো-বাতাস আজনবি মুসাফিরদের স্বাগত জানাচ্ছিল।
উয়ুনে মূসার একটি কুপের পাশে
 
গাড়ি তূরে সিনায় পৌঁছতে এখনও অনেক বাকি। গাড়ি যতই তুরে সাইনার নিকটবর্তী হচ্ছে ততই আমি আল্লাহর নিয়ামত অবলোকন করছি। একদিকে লোহিত সাগর। তার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করছি আর মনে মনে চিন্তা করছি, এই সেই সমুদ্র যাতে মহান আল্লাহ তা’আলা তার দুশমনকে চুবিয়ে মেরেছেন এবং তার প্রিয় বান্দাদের বাঁচিয়েছেন। কুরআনে তা বর্ণিত হয়েছে এভাবে-
“আমি মূসা ও তার সাথে যারা ছিল সকলকে রক্ষা করেছি। অতপর অন্যদের ডুবিয়ে মেরেছি।”
আসলে আল্লাহর কুদরতের সামনে দুনিয়ার সব শক্তিই তুচ্ছ। তারপরও মানুষ এই নিদর্শন থেকে কেন শিক্ষা গ্রহণ করে না? কোথায় সেই দাম্ভিক ফেরাউন ও তার বিশাল সৈন্য বাহিনী?
আল্লাহর এক ইশারাতেই মুহূর্তের মধ্যে তাদের সলিল সমাধি হয়েছে। এই সেই সমুদ্র, যুগ যুগ ধরে সেই সত্যের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। বাস যত সামনে অগ্রসর হতে লাগল মনে হলো পাহাড়ের বেষ্টনি থেকে বের হওয়ার জন্য আমরা পথ খুঁজছি। পাহাড়ের পর পাহাড়। উঁচু-নিচু, ছোট-বড়, রং বে-রংয়ের পাহাড়। হঠাৎ দুদিকে কাটা খাড়া পাহাড় দেখে গা ছমছম করে ওঠে। বিরাট বিরাট পাথরখণ্ড পাহাড়ের গায়ে এমন ভাবে লেগে রয়েছে, যেন একটু নাড়া খেলেই গাড়ীর উপর এসে আছড়ে পড়বে এবং যাত্রীসহ গাড়ী দুমড়ে-মুচড়ে দিবে।
 
পথের দূরত্ব যত কমে আসছে মনের ব্যাকুলতা তত বেড়ে চলেছে।
এ কি স্বপ্ন! নাকি সত্যি!
আবারো পাহাড়ের সৌন্দর্য্য অবলোকন করতে থাকলাম। মনের মাঝে এক আশ্চর্য অনুভূতি হচ্ছিল এই সকল পাহাড় পর্বতে কত নবীদের আগমন ঘটেছে তার কোনো হিসাব নেই।
আমার জানা ছিলো হযরত সালেহ (আ.) ও হারুন (আ.) এর কবর এদিকে কোনো এক জায়গায়। তাই আমি বারবার জানালার ফাঁক দিয়ে তাকাচ্ছিলাম। গাড়ি যখন তুরে সিনার কাছাকাছি চলে আসল তখনই আমি দেখতে পেলাম রাস্তার পাশে একটি পাথরের গায়ে খোদাই করে লেখা হযরত সালেহ (আ.) এর কবর। গাড়ি থামল, আমরা নেমে কবর যিয়ারত করলাম।
 
তারপর গাড়ি আবার চলা শুরু করল। তাঁর বেশ কিছুদূর চলার পরই আবারও চোখে পড়ল হযরত হারুন (আ.) এর কবর। দেখলাম রাস্তার পাশের একটি কাষ্ঠফলক। যাতে আরবীতে লেখা ছিল “قبر سيدنا هارون”।
আল্লাহ তা’আলার অশেষ শুকরিয়া আদায় করলাম। সেখানে গাড়ি কিছুক্ষনের জন্য পুনরায় থামল। আমরা সকলে গাড়ি থেকে নেমে কবর যিয়ারত করলাম।
 
পুনরায় গাড়ি রওনা দিল। আরো বেশ কিছুক্ষণ চলার পরই গাড়ি তূর পাহাড়ের পাদদেশে এসে পৌছলাম। আমরা সবাই আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করলাম। দীর্ঘ প্রায় বার ঘণ্টা বাসে কাটিয়ে অবশেষে তুরে সিনার একদম কাছে পৌঁছলাম।
আমরা যার যার মত প্রস্তুতি নিয়ে বাস থেকে নেমে একটি রেস্টুরেন্টে উঠলাম। সেখানে ফ্রেশ হয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করত: রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। তারপর রাত ১১.৩০-১২.৩০ টার মাঝে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে নাস্তা গ্রহণ পূর্বক সবাই তূর পাহাড়ে উঠার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে তূর পাহাড়ের দিকে গাড়িতে করে ছুটলাম। তখন রাত ১.০০ টা ।
 
রাতে পাহাড়ে উঠার জন্য সকলের কাছে টর্চ লাইটসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি মজুদ ছিল। তূর পাহাড়ের কাছাকাছি কয়েকটি পাহাড় আছে। তার মধ্যে একটি পাহাড়ের নাম ‘সেইন্ট ক্যাথরিন’। এই পাহাড়টি দক্ষিণ সিনা জেলায় অবস্থিত এবং মিশরের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়। এই পাহাড়টি মূসা আলাইহিস সালামের পাহাড়ের সাথে একেবারে লাগানো। খ্রিস্টানরা এটাকে মহা পবিত্র স্থান মনে করে। তাই পৃথিবীর সব প্রান্ত থেকে খ্রিস্টান পর্যটকরা এই পাহাড় যিয়ারত করতে ছুটে আসে। পাহাড়টি মূলত খ্রিস্টান সন্ন্যাসীদের আবাসস্থল ছিল। বড় বড় ধর্মযাজকরা এখানে এসে বসবাস করত। যার ফলে খ্রিস্টানদের কাছে এটার গুরুত্ব অনেক বেশি। এর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬০০ মিটার। এই পাহাড়টি দেখতে অনেক সুন্দর। সোনালি রংয়ের।
 
তুর পাহাড় দক্ষিণ সিনাই জেলায় অবস্থিত। সিনাইর মূল শহরের নাম ‘আত তুর’। বড় শহর হলো শারমুশ শাইখ। জনসংখ্যা ১৭৭৯০০। এই পাহাড়ের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২৮৫ মিটার। প্রায় ৭ কিলোমিটার। এই পাহাড়কে জাবালে মূসা নামে নামকরণ করা হয়েছে।
সিনাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি জেলা এবং এই এলাকার নাম কুরআন মাজীদে উল্লেখ হয়েছে। এই পাহাড়ি এলাকায় এক প্রকার গাছ হয় যা থেকে তেল তৈরি হয়। সিনাই নবীদের বরকতময় ভূমি। এই এলাকায় অনেক নবী রাসূলের আগমন ঘটেছে। এখানে রয়েছে সেই ঐতিহাসিক ‘জাবালে মূসা’, অনেক নবীদের কবর, বনী ইসরাঈলের ‘তী-হ’ নামক ময়দান। আরো অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাথে এই মাটি ও পাহাড় সম্পৃক্ত। সুতরাং এই ভূমির বরকত ও নিয়ামত কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ।
 
এলাকাটি মিশরবাসী ও মিশর সরকারের কাছে বরং পুরো মুসলিম উম্মাহর কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা।
ইসরাঈল সবসময় এটা দখল করতে চায়, যে কোনো মূল্যে। যার ফলে অনেক সময় হামলা করে বসে এবং বিভিন্ন গ্রুপে এই এলাকাটা দখল করার জন্য বিভিন্ন সময় সেনাবাহিনীর উপর হামলা করে থাকে। অনেক সেনাও এতে হতাহত হয়।
যুগ যুগ ধরে সিনাইর ভৌগলিক অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটা এশিয়া মহাদেশ ও আফ্রিকা মহাদেশের একমাত্র স্থলভাগ যেখানে দুটি মহাদেশ পাশাপাশি মিলিত হয়েছে।
 
প্রাচীন কাল থেকেই মিশর ও গোটা আফ্রিকার মানুষ হিজায, প্রাচীন রোম ও পারস্যের সাথে স্থল যোগাযোগের জন্য সিনাই উপত্যকা ব্যবহার করত। আকাশ ও সমুদ্রপথে যোগাযোগ সহজ হওয়ার আগে এই সিনাই ছিল গোটা আফ্রিকা ও এশিয়ার বাণিজ্যিক, কূটনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আদান প্রদানের গুরুত্বপূর্ণ পথ।
 
৬৪০ খ্রিস্টাব্দে আমর বিন আস (রা.) এর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনীও এই সিনা হয়েই মিশরে আসে এবং ওখানেই বাইজেন্টাইনদের প্রতিরোধের মোকাবেলা করে। দ্বাদশ শতকের ক্রুসেড বাহিনীর সাথেও মিশরের আইয়্যুবিদের সাথে অনেক যুদ্ধ হয় এই সিনাইতে।
১১৮৭ সালে যে ঐতিহাসিক হিট্টিনের যুদ্ধে সালাহউদ্দিন আইয়্যুবির নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী কর্তৃক ক্রুসেডারদের পরাজয় ঘটে, সে হিট্টিনও ঐতিহাসিক সাইনার অংশ, যা বর্তমানে ফিলিস্তিনের অংশ। ত্রয়োদশ শতকের মাঝামাঝি ১২৬০ ঈ. মিশরের মামলুকি আমলে তাতারিদের সাথে যে ঐতিহাসিক আইন জালুত যুদ্ধ হয় তাও এই সিনাতে।
 
এভাবে সব যুগের সাম্রাজ্যবাদীদের লোলুপ দৃষ্টি থাকত এই সিনাইর দিকে। এখানে অধিকার বিস্তার ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা নিয়ে অনেক যুদ্ধ হয়েছে। আধুনিককালের অন্যতম যুদ্ধ হল মিশর-ইসরাঈল যুদ্ধ। ১৯৬৭ সালে সুয়েজখাল পর্যন্ত গোটা সিনাই অঞ্চল মিশর থেকে ইসরাঈল ছিনিয়ে নিয়েছিল। পরে ১৯৭৩ সালের ৬ অক্টোবর এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে মিশর তা পুনরুদ্ধার করে।
আর আধুনিককালে সিনাই উপদ্বীপের বুক চিরে সুয়েজখাল খনন করে ভুমধ্যসাগর ও লোহিত সাগরের মাঝে সংযোগ ঘটানোর ফলে আন্তর্জাতিক সমুদ্র যোগাযোগে যে গতি এসেছে তাও ভৌগোলিক দিক থেকে সিনাইর গুরুত্ব অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই সিনাই হলো ইসলাম ও প্রাক-ইসলামিক যুগ থেকেই মিশর ও আফ্রিকার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল।
 
যাক আগের কথায় ফিরে আসি। তূর পাহাড়! কী মধুর অনুভূতি। যখন তুর সম্পর্কিত আয়াতগুলোর তরজমা বুঝতে পেরেছি, তখন থেকেই তুর পাহাড়ের প্রতি এক অজানা মহব্বত তৈরি হয়েছে। এই সেই তুর পাহাড় যার কথা কুরআনে কয়েক জায়গায় এসেছে, ইরশাদ হচ্ছে,
“এ কিতাবে মূসার বৃত্তান্তও বিবৃত কর। নিশ্চয়ই সে ছিল আল্লাহর মনোনীত বান্দা এবং তাঁর রাসূল ও নবী। আমি তাকে তূর পাহাড়ের ডান দিক থেকে ডাক দিলাম এবং তাকে আমার অন্তরঙ্গরূপে নৈকট্য দান করলাম। আর আমি তার ভাই হারুনকে নবী বানিয়ে নিজ রহমতে তাকে (একজন সাহায্যকারী) দান করলাম। -সূরা মারইয়াম (১৯) ৫১-৫৩
 
অতপর আমরা সবাই সেই পবিত্র উপত্যকার দিকে রওনা হলাম। মনের মাঝে তোলপাড় সৃষ্টি হলো। মহান আল্লাহ তাআলার দরবারে বললাম, হে আল্লাহ! তুমি তো জান আমি কত গুনাহগার। তুমি আমাকে পবিত্র করে দিও ।
আবারো কুরআনে মূসা আলাইহিস সালাম সর্ম্পকে এই পাহাড় নিয়ে যে আয়াতগুলো নাযিল হয়েছে তা স্মরণ করছিলাম।
সেখানে একটা গাছ আছে। গাছটি অনেক অনেক সুন্দর। হাজার হাজার বছর ধরে এভাবে গাছটা বেঁচে আছে। এটা আল্লাহ তাআলার অনেক বড় কুদরত। এই বরকতপূর্ণ গাছ দুনিয়ার অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না এবং এর পাতা কখনো মরে না। সেখানে লেখা আছে এই গাছের পাতা ছেঁড়া নিষেধ। গাছটা আমাদের দেশের লতা গাছের মত। এ জন্যই তো এই গাছটার নাম আশশাজারাতুল মুয়াল্লাকা অর্থাৎ ঝুলন্ত গাছ। গাছটা এখন একটি গির্জার মধ্যে। সেখানে নিচের দিকে দেয়াল দিয়ে বেষ্টনী করে রাখা হয়েছে। গির্জা বন্ধ ছিল, ফলে ঐ বৃক্ষটি দেখা সম্ভব হয়নি ! আফসোস করছিলাম আর বলছিলাম এই গাছ কতই না সৌভাগ্যশালী। যেখানে মহান আল্লাহ তাআলা মূসা আলাইহিস সালামকে ডেকেছেন এবং কথা বলেছেন। এই গাছ ও স্থান কতই না বরকতময় এর ধুলিকণা কতই না দামী…!
 
মনের মধ্যে আল্লাহর বড়ত্ব ও আযমতের কথা স্বরণ করে এবং নিজের আবদিয়াত ও দাসত্বের অনুভূতি অন্তরে জাগরুক রেখে, তুর পাহাড়ে আরোহণের জন্য চেকপোস্ট থেকে বের হয়ে একটু পরেই আমরা হাঁটতে থাকলাম। রাস্তার পাশেই বেশ কিছু উট দেখতে পেলাম। উট চালকরা তাদের উটকে টুরিস্টদের কাছে ভাড়া দেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। উটে আরোহণ করে পাহাড়ের একটা নির্দিষ্ট জায়গায় ওঠা যায়। সেই পর্যন্ত ওঠার ভাড়া মিশরীয় একশ-দুইশ পাউন্ড। পাহাড়ে উঠার পথে মাঝেমাঝে ছোট ছোট ক্যানটিনের ব্যবস্থা রয়েছে। সকল ক্লান্তিকে উপেক্ষা করে আমরা পাহাড়ের চুড়ার কাছাকাছি পৌঁছি। সেখানে একটি ক্যানটিনে আমরা ফজরের নামাজ আদায় করি। এরপর সেখান থেকে আরও প্রায় ১০০ সিড়ি বেয়ে চূড়ায় উঠেছিলাম। নিচ থেকে পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছতে আমাদের সময় লেগেছিল প্রায় চার ঘণ্টা।
এই পাহাড় সম্পর্কে যত আয়াত নাযিল হয়েছে তা স্মরণ করতে করতে উঠতে থাকলাম। যতই উপরের দিকে উঠছি ততই আল্লাহ তাআলার নিয়ামতের সৌন্দর্য্য অবলোকন করছি। আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করছি। জীবনে আগে কখনো পাথরের পাহাড়ে উঠিনি। আমাদের দেশের মাটির পাহাড়ে ওঠার সৌভাগ্য হয়েছে। তাতে রয়েছে সবুজের বাহার। পক্ষান্তরে পাথরের পাহাড়ে রয়েছে বিভিন্ন রংয়ের মেলা। বড় বড় পাথর কী চমৎকার সাজে সজ্জিত। মহান আল্লাহ তা’আলার সৃষ্টি কত সুন্দর! আসলে আল্লাহর কুদরত নিয়ে তেমন ভাবা হয় না। যার ফলে আমাদের মাঝে ঈমানের দুর্বলতা সৃষ্টি হয়। এজন্যই তো মহান আল্লাহ তা’আলা সৃষ্টি সর্ম্পকে বলেছেন, তোমরা পাহাড়ের দিকে তাকাও। কীভাবে তা নিপুণভাবে স্থাপন করা হয়েছে।
 
পাহাড়ের চূড়ায় উঠার জন্য পাথর কেটে কেটে ছোট করে রাস্তা বানানো হয়েছে। এই রাস্তা ছাড়া বেয়ে উপরে ওঠা খুবই কঠিন। রাস্তা অনেক ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে করা হয়েছে।
আমরা পাহাড়ের পথ বেয়ে উপরে উঠতে থাকলাম।
এভাবে আল্লাহ তাআলার অশেষ মেহেরবানীতে একপর্যায়ে যখন শত কষ্ট, ক্লান্তিকে উপেক্ষা করে চূড়ায় পৌঁছলাম। তখন মনের অজান্তে আনন্দে চোখ থেকে অশ্রু বইতে লাগল। আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করতে থাকলাম। তিনি আমাদেরকে গায়েব থেকে সাহায্য করেছেন। তিনি সাহায্য না করলে আমরা কখনই উঠতে পারতাম না। দিল থেকে বললাম আল্লাহু আকবার।
পাহাড়ের চূড়াটা ঘুরে দেখলাম। যেখানে বসে মূসা আলাইহিস সালাম আল্লাহকে পাওয়ার জন্য ইবাদতে রত ছিলেন সেই গুহা দেখলাম। এখানেই মূসা আলাইহিস সালাম পবিত্র তাওরাত কিতাব লাভ করেছিলেন।
ইতিমধ্যে কেউ কেউ গুহার নিচে গিয়ে ছবি তুলতে লাগল। যেখানে মুসা (আ.)বসে আল্লাহ তাআলার ইবাদতে নিমগ্ন ছিলেন।
পাহাড়ের গুহায় ছোট একটি মসজিদ আছে এবং ছোট একটি গির্জা আছে। অনেকে বলে থাকে মসজিদটি ফাতেমি খেলাফতের সময় করা হয়েছে। সেখানে গেলে তাতে অনেকে নামায আদায় করে।
 
তূর পর্বতমালার দূরদর্শন
তূর পাহাড়ের চুড়া থেকে সেলফি
যে পাহাড়টিতে আল্লাহ তাআলার নূরের তাজাল্লিতে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়েছিলো তা তুর পাহাড় থেকে উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। আমাদের সেখানে আর যাওয়া সম্ভব হয়নি।
 
মহান আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সহী-সালামতে তূর পাহাড়ে আরোহণ করার এবং নিরাপদে ফিরে আসার তৌফিক দান করেছেন। সব প্রশংসা মহান আল্লাহ তাআলার।
 
পাহাড়ের চূড়ায় প্রায় ঘন্টা খানিক অবস্থানের পর আমরা নামতে শুরু করি। উপর থেকে সমতলে নেমে আসতে আমাদের প্রায় ৩ ঘন্টা লেগেছিল।
তুর পাহাড় থেকে নেমে এসে কমবেশি আমরা সবাই ক্লান্ত। বিশেষ করে সবার পায়ের অবস্থা খুব খারাপ। পা যেন আর চলছিলো না। তারপরও সবাই রেস্টুরেন্টে ফিরে তাড়াহুড়া করে খাওয়া শেষ করে বেড়িয়ে পড়ি শারমুশ সাইখের উদ্দেশ্যে।
গাড়ি কায়রোর উদ্দেশ্যে ছুটে চলল। পথে দেখব শারমাশ শাইখ বীচ। এক সময় তূর পাহাড় দৃষ্টির আড়াল হয়ে গেল। তারপর আমরা পৌছলাম শারমাশ শাইখ বীচে।
 
এই স্থান সম্পর্কে বিশেষ করে কিছু না বললেই নয়। আর সেটি হল, শারমাশ শাইখ বীচের এই শহরটি বিশ্বের চতুর্থতম সুন্দর শহর বলে গণ্য করা হয়। এত সাজানো-গোছানো ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। যা আসলেই মনোমুগ্ধকর। যে কেউ এ শহর দেখলে তার ভাল না লেগে কোন উপায় নেই।
আর এই শহরেই থাকেন মিশরের বর্তমান সেনাপ্রধান ও প্রেসিডেন্ট আব্দুল ফাত্তাহ সিসি। সেজন্য এই পুরা শহরটি অত্যন্ত নিরাপত্তার বেষ্টনি দিয়ে ঘেরা।
সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করলাম। বিভিন্ন মন মাতানো নতুন নতুন দৃশ্য উপভোগ করলাম। তারপর সেখানে এক মসজিদে আছরের নামাজ আদায় করে রওনা দিলাম। তার থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার এসে একটা বিরতি হলো। সেখানে মাগরিবের নামাজ পড়লাম। তারপর হলো রাতের খানা। সর্বশেষ সেখানে এশার নামাজ পড়ে কিছুক্ষন পর কায়রোর উদ্দেশ্যে যাত্রা করি। তারপর মাঝ পথে আর একটি ছোট বিরতি হয়েছিল। অবশেষে, আমরা শনিবার ফজরের সময় কায়রো শহরের আমাদের গন্তব্যে পোঁছি।
 
সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ তা’আলার। যিনি আমাদের সফরকে বরকতময় করেছেন এবং কুদরতিভাবে আমাদের সফরকে সহজ করেছেন। আল্লাহর খাস মেহেরবানীতে এই কষ্টকর সফর সহজ হয়েছে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সফরের সব ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দেন এবং সফরকে কবুল করুন। (আমীন)
 
সর্বশেষে পরিসমাপ্তি টানতে গিয়ে ঐ সকল ভাইদের কথা কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি এবং প্রাণ খুলে দোয়া করছি।
যেসকল ভাইদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টার ওয়াসিলায় মহান আল্লাহ পাক এসকল স্থানসমূহ পরিদর্শন করার সুযোগ করে দিয়েছেন।
বিশেষ করে বাংলাদেশ স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশন এর সম্মানিত সভাপতি ঈসা আহমাদ ইসহাক ভাই, সেক্রেটারি মাসুম বিল্লাহ ভাইসহ সকল দায়িত্বশীল ভাইদের….. আরও বিভিন্নজন বিভিন্ন সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
 
আল্লাহর জাত ও পাক তাদের সকলকে এর বদৌলতে দুনিয়া ও আখিরাতে উত্তম প্রতিদান দান করুক।  আমিন……
 
 
মরুভূমিতে চার বন্ধু
শারম শেখের ফুটপাথে
 
সূত্র
Md. Mahmudul Hasan

ঈসা আহমাদ ইসহাক

সহযোগী সম্পাদক : নিউজ বিভাগ এবং প্রধান অনুবাদক: আরবী বিভাগ

এই বিভাগের আরো সংবাদ

Back to top button