পৃথিবীর রাজধানী নিউ ইয়র্কের একটি রাস্তার নাম ‘লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ’
বাঙালির শোকের দিনে নিউ ইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য এলো এক আনন্দঘন অর্জন
দিনটি ছিল একুশে ফেব্রুয়ারি। মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবাহী এই দিনটি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাঙালির শোক ও অর্জনের মহান সেই দিনটিতেই নিউ ইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য এলো আনন্দঘন এক উদযাপনের উপলক্ষ। পৃথিবীর রাজধানী বলে ডাকা হয় যে শহরকে, সেই নিউ ইয়র্কের একটি রাস্তার নাম এখন ‘লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ’।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে অনেক দিন ধরেই এ নিয়ে প্রচেষ্টা ছিল। কিন্তু সেই প্রচেষ্টা এত দিন সার্থকতা পায়নি। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষের স্রোত এসে মিশেছে নিউ ইয়র্কে। সেই দলে প্রতিদিনই বাড়ছে বাংলাদেশি মানুষের সংখ্যাও। গোটা যুক্তরাষ্ট্রে যত বাংলাদেশির বাস, তাদের বেশির ভাগই থাকে নিউ ইয়র্কে। আবার পরিসংখ্যান বলছে, নিউ ইয়র্কে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের ৬৫ শতাংশের আবাস কুইন্সে। ফলে দিনে দিনে যে দাবিটি জোরালো হয়েছে, এবার বাস্তব হয়েছে সেই আশা।
স্থানীয় সময় সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ছিল প্রেসিডেন্ট ডের সরকারি বন্ধ। ফলে জ্যামাইকার হোমলন স্ট্রিটে জড়ো হয় অসংখ্য প্রবাসী বাংলাদেশি। এই হোমলন স্ট্রিট এখন পরিচিত হবে ‘লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ’ নামেও। দুপুরের দিকে আনুষ্ঠানিকতার জন্য নির্ধারিত থাকলেও সকাল থেকেই সেখানে জড়ো হতে থাকে অনেকে। সেখানকার সড়কদ্বীপে স্থাপন করা হয় অস্থায়ী শহীদ মিনার। আর সেখানে বাজতে থাকে জাগরণের সব গান। বাংলাদেশের পতাকা আর ফুল নিয়ে হাজির হয় অনেকে।
অনেক দিন ধরেই জ্যামাইকা এলাকায় একটি স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ ও বাংলাদেশের নামে রাস্তার নামকরণের প্রচেষ্টা ছিল স্থানীয়দের। অনেকে নানাভাবে চেষ্টা করেছেন। শেষমেশ রাস্তার নামকরণের সুযোগ আসে। সাউথ এশিয়ান আমেরিকান ভয়েস নামে একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে মোহাম্মদ তুহিন প্রস্তাবটি রাখলে ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল ২৪-এর কাউন্সিলম্যান জেমস এফ জিনারো তা সিটি কাউন্সিলে উত্থাপন করেন। পরে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর প্রস্তাবটি পাস হয়।
দুপুরের পর সেখানে আসেন কাউন্সিলম্যান জেমস এফ জিনারো। আরো আসেন স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান ডেভিড উইপ্রেন, নিউ ইয়র্কে নির্বাচিত প্রথম দক্ষিণ এশিয়ান বংশোদ্ভূত স্টেট অ্যাসেম্বলিওম্যান জেনিফার রাজকুমার, কুইন্স কাউন্টির অ্যাটর্নি জেনারেল মেলিন্ডা কেটসসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের অনেকে। নিউ ইয়র্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, ডেপুটি কনসাল জেনারেল নাজমুল হাসান সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ছিলেন বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্টজনদের অনেকে।
পরে আনুষ্ঠানিকভাবে মোড়ক উন্মোচন করা হয় রাস্তার নতুন নামের। সবুজ রঙের প্লেটে সাদা রঙে লেখা ‘লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ’ নামটি দেখে তখন উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আনন্দে তারা স্লোগান দিতে শুরু করে। সেখানে তৈরি হয় উৎসবমুখর একটি পরিবেশ। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে অনেকে ছবি তোলে, অনেকটা সময় কাটায় সেখানে।