গত ১০ ডিসেম্বর ২০২১ (জুমাবার) মিশরের আযহার ওয়েলফেয়ার সোসাইটি বাংলাদেশ (কায়রো পরিষদ ২০২১-২২ সেশন)-এর উদ্যোগে কায়রো শহরের প্রসিদ্ধ মসজিদুত তাইসির হলরুমে অনুষ্ঠিত হয় বার্ষিক সম্মেলন ও কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা ২০২১।
মনিরুল ইসলাম, আবদুর রহমান বিন মুহাম্মদ ও হুজাইফা আওয়াদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আযহার ওয়েলফেয়ার সোসাইটি বাংলাদেশ কায়রোর সভাপতি এমফিল গবেষক জনাব শরিফ উদ্দিন আবদুল মান্নান৷
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মিশরস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের মান্যবর রাষ্ট্রদূত জনাব মো. মনিরুল ইসলাম৷ অনুষ্ঠানস্থলে মান্যবর রাষ্ট্রদূতের আগমনে তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নেন কায়রো পরিষদ ২০২১-২২ সেশনের সভাপতি ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ৷
বাদ মাগরিব আরম্ভ হওয়া অনুষ্ঠানটি বিভক্ত ছিলো নবীন বরণ, পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায়। মূল হলরুম ও পর্দাবেষ্টিত নারীদের কর্ণারে প্রায় দুই শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক ও কঁচিকাঁচা, শিশু-কিশোরের অংশগ্রহণে বিরাজ করছিলো মনোমুগ্ধকর এক বাঙালি পরিবেশ।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ছিলো কোরআন তেলাওয়াত ও বঙ্গানুবাদ, ইসলামি নাশিদ, সভাপতির স্বাগত বক্তব্য, ২০২১ সালে মিশরে আগত ৪০জন কওমি শিক্ষার্থীর নবীন বরণ ও নবীনদের অনুভূতি প্রকাশসহ নানা আয়োজন।
দ্বিতীয় পর্ব মেতে ওঠে আল আযহার ইউনিভাসির্টির বিভিন্ন ফ্যাকাল্টি থেকে ২০২১ সেশনে গ্রাজুয়েট সম্পন্নকারী শিক্ষার্থীদের ব্যাজ ও সম্মাননা প্রদান, বিভিন্ন ক্যাটাগরির দায়িত্বশীল সম্মাননা ও কৃতি ছাত্র সংবর্ধনার মাধ্যমে৷
আযহার ওয়েলফেয়ার সোসাইটি বাংলাদেশ কায়রোর বিগত ২০২০-২১ সেশনের উপদেষ্টা পরিষদ, নির্বাচন কমিশন, ‘বাংলাদেশে স্টুডেন্ট অরগানাইজেশন মিশর’-এর প্রতিনিধি, কায়রো পরিষদ ও শাখা কমিটিসমূহের সকল দায়িত্বশীলকে রাষ্ট্রদূত মহোদয়ের হাত থেকে সম্মাননা ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। সেবা, দায়িত্ববোধ, ছাত্রকল্যাণ, ডোনেশন ও আদর্শ চরিত্রের মানদণ্ডে বিশেষ পাঁচজন শিক্ষার্থীকে প্রদান করা হয় ‘সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২০-২১’।
বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে আল আযহারের সেরা পাঁচ মেধাবী কওমি শিক্ষার্থীকে প্রদান করা হয় ‘বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার’৷ দূতাবাস কর্তৃক সম্মাননা প্রাপ্ত শিক্ষার্থীগণ হলেন—ডক্টর হাসিবুর রহমান, ডক্টর আবদুল হামিদ বিন শামসুল হক, মাওলানা মাজহারুল ইসলাম, মাওলানা আসআদুজ্জামান ও মাওলানা জাওয়াদ আহমদ সৌরভ।
দূতাবাস সম্মাননা প্রদানের পর ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করা হয়। আল আযহার ইউনিভার্সিটির ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের বিভিন্ন ফ্যাকাল্টির ১৩জন মুমতাজ (এক্সিলেন্ট) ও ৩১জন জায়্যিদ জিদ্দান (ভেরি গুড) গ্রেড অধিকারী শিক্ষার্থী এবং ইনস্টিটিউটের হায়ার সেকেন্ডারির ২জন ও সেকেন্ডারির ৪ জন শিক্ষার্থী (অন্যতম টপটেন হিসেবে) মান্যবর রাষ্ট্রদূতের হাত থেকে পুরস্কার ও সংবর্ধনা প্রাপ্ত হন। এ ছাড়া প্রাইমারি ও নার্সারিতে অধ্যয়নরত সকল শিশু-কিশোরকেও পুরস্কৃত করা হয়।
পরিশেষে আল আযহার ইউনিভাসির্টির পিইচডি গবেষক ও আযহার ওয়েলফেয়ার সোসাইটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জনাব লুতফে রাব্বি আফনানের ‘আযহার ওয়েলফেয়ার সোসাইটির ইতিহাস : উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক বক্তব্যের মাধ্যমে দ্বিতীয় পর্ব সমাপ্ত হয়।
তৃতীয় পর্ব মেতে ওঠে জমকালো বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায়৷ ইসলামি সংগীত, স্বাধীনতার কাব্য, আরবি কাব্য, বিবিধ অভিনয়-কৌতুক, বরিশাল ও নোয়াখালি জেলার আঞ্চলিক ভাষায় আত্মগৌরব বিতর্ক, রম্যরসে টইটম্বুর সংবাদ পাঠ, শীত ভালো না গরম ভালো শীর্ষক উপস্থিত বিতর্কসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও বিনোদনমূলক আয়োজনে উপস্থিত সবাই যেনো উল্লাসে ফেটে পড়ছিলো৷
সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা শেষে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রাষ্ট্রদূত মহোদয়ের বক্তব্যের মাধ্যমে পুনরায় ফিরে আসে অনুষ্ঠানের গাম্ভীর্য। মাননীয় রাষ্ট্রদূত তাঁর মূল্যবান বক্তব্যে বলেন, ‘তোমাদের মাঝে এসে আমার সেই চল্লিশ বছর পূর্বের এসএসসি পরীক্ষার পুরস্কার গ্রহণ অনুষ্ঠানের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বাসায় থাকলে আর কি-ই বা করতাম! এখানে আমি শতাধিক বাঙালি শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে পেয়ে সত্যই আমি অনেক আনন্দিত ও মুগ্ধ। তোমাদের কওমির শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে বহু মেধা ও প্রতিভার অধিকারী কৃতি শিক্ষার্থী৷ যা আমার দেশের গৌরবকে বৃদ্ধি করছে। আল আযহারের সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ইন্দোনেশিয়া, মালেশিয়া ও আফ্রিকার। কিন্তু সবচেয়ে ভালো রেজাল্ট বাঙালি স্টুডেন্টদেরই। বহিঃবিশ্বের বড় বড় কনফারেন্সে গিয়ে বিখ্যাত ব্যক্তিদের মুখে বাংলাদেশি স্টুডেন্টদের সাফল্যের প্রশংসা শুনে সত্যিই আমার বুকটা গর্বে ভরে যায়৷’
মাননীয় রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ‘দেশে গিয়ে তোমাদেরই সমাজের দায়িত্বভার নিতে হবে। বাঙালি মুসলিমদের নিয়ে দেশ-জাতি ও ইসলামের স্বার্থে কাজ করতে হবে। সেভাবেই তোমরা নিজেদের জীবনকে গড়ে তোলো৷ শুরু থেকেই আমি সার্বক্ষণিক তোমাদের পাশে আছি। তোমাদের যেকোনো সমস্যার কথা আমাকে জানাতে পারো। আমি সমাধানের যথাসাধ্য চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ৷’
পরিশেষে সোসাইটির সিনিয়র সদস্য আখতারুজ্জামান পরিচালিত দোয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের ধারাবাহিক কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।