আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে মিসরে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম)-এর বিশেষ সাক্ষাৎকার
‘‘শতবর্ষে জাতির পিতা, সুবর্ণে স্বাধীনতা; অভিবাসনে আনবো মর্যাদা ও নৈতিকতা’’
- ১৯৯০ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক অভিবাসী কর্মী এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের অধিকার রক্ষা সংক্রান্ত কনভেনশন গৃহীত হয়। ওই দিবসটির কথা মাথায় রেখে ২০০০ সালের ৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ সারা বিশ্বে ১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আর সে বছর থেকেই প্রতি বছরের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘের অন্যান্য সদস্য দেশের সাথে দেশে ও বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে দিবসটি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালন করে থাকে। নীলনদ আর পিরামিডের দেশ মিসরে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে কায়রোস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস উদযাপন করবে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস। অভিবাসীদের জন্য এই বিশেষ দিনটি উপলক্ষে দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মুহাম্মদ ইসমাইল হুসাইন এর বিশেষ সাক্ষাৎকার। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আফছার হোসেন।
ভালো সংবাদঃ আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে মিসরে বাংলাদেশ দূতাবাসও নানাভাবে দিনটি উদযাপন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে একটু বিস্তারিত জানাবেন কি ?
প্রথম সচিবঃ ‘‘শতবর্ষে জাতির পিতা, সুবর্ণে স্বাধীনতা; অভিবাসনে আনবো মর্যাদা ও নৈতিকতা’’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও যথাযোগ্য মর্যাদায় আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস-২০২১ বাংলাদেশ দূতাবাস কায়রোস্থ দূতাবাসের হল রুমে আগামী ১৮ ডিসেম্বর ২০২১ উদযাপিত হবে। সন্ধ্যা ৬:৩০ মিনিট পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হবে। বাংলাদেশ হতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী কর্তৃক প্রেরিত বাণী পাঠ, দিবসটির তাৎপর্য্যের ওপর আলোচনা এবং সন্ধ্যা ৭:৩০ মিনিট আমন্ত্রিত প্রবাসী কর্মীদের জন্য রাতের খাবারের আয়োজন করা হয়েছে।
ভালো সংবাদঃ মিসরে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কতজন রেমিট্যান্সযোদ্ধা আছে, সাফল্য কতটুকু? আর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
প্রথম সচিবঃ মিসরে বর্তমানে প্রায় ১২-১৫ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মী রেমিট আহরনের লক্ষে বিভিন্ন কারখানা/প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। কর্মীদের ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি সহজীকরণের লক্ষে মিসরের জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক হয়েছে। মিসরের জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের নীতি নির্ধারণ বৈঠকে বিষয়টি উপস্থাপন করবেন মর্মে আমাদের জানিয়েছেন। তাছাড়া উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির বিষয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত আছে। চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী মিসরে আনা সম্ভব হবে।
ভালো সংবাদঃ রাজধানী কায়রো ছাড়াও মিসরের বিভিন্ন শহরে, বিশেষ করে আলেক্সজান্দ্রিয়া, পোর্ট সাইদ, ইসমালিয়া ও আশারা রমাদান শহরে পোশাক শিল্পে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের দূতাবাস কি ধরণের সহযোগিতা করে থাকে?
প্রথম সচিবঃ শ্রম কল্যাণ উইং, কায়রো, মিসর প্রতি মাসে মিসরস্থ বিভিন্ন প্রদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীদের আবাস্থল, কারখানা, প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা হয়। বিভিন্ন প্রদেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক সুরক্ষা, ব্যক্তিগত সামাজিক নিরাপত্তা, পারিবারিক উন্নয়ন, কর্মক্ষেত্রে মালিকপক্ষের সাথে সৃষ্ট সমস্যাসমূহ শুনে পর্যালোচনা করে তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মালিক পক্ষকে চাপে রেখে কর্মীদের স্বার্থ রক্ষা করা এবং তাদের মানসিক দক্ষতা ও উন্নয়নে পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হয়।
ভালো সংবাদঃ মিসরে নতুন শ্রমবাজার তৈরির আপনার কোন বিশেষ উদ্যোগ আছে কি?
প্রথম সচিবঃ ইতোপূর্বে মিসর দূতাবাসের মান্যবর রাষ্ট্রদূতের সাথে আমি মিসরের অভিবাসী মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে এ বিষয়টি উপস্থাপন করা হলে তিনি বর্তমানে মিসর সরকার অন্য দেশ হতে কর্মী আনার বিষয়ে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। তাদের মধ্যে বেকার সমস্যা প্রকট হওয়ায় তথাপিও উচ্চ পর্যায়ের নীতি নির্ধারণী বৈঠকে তিনি বাংলাদেশ হতে কর্মী আনার বিষয়ে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবেন মর্মে আশ্বাস দেন। তাছাড়াও জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের সাথেও আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত আছে।
ভালো সংবাদঃ পোশাক শিল্প ছাড়া অন্য কোন কোন খাতে বাংলাদেশি দক্ষ শ্রমিকদের জন্য কাজের সম্ভাবনা আছে? বিস্তারিত জানানো যাবে কি?
প্রথম সচিবঃ পোশাক শিল্প ছাড়াও মিসরে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য কনস্ট্রাকশন ও কৃষি খাতে কাজের সম্ভাবনা রয়েছে।
ভালো সংবাদঃ মিসরে কোন কোন সেক্টরে বাংলাদেশের দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকদের চাহিদা বেশি? নতুনভাবে শ্রমিক আসার সম্ভাবনা কতটুকু?
প্রথম সচিবঃ মিসরে তৈরি পোশাক শিল্প এবং কৃষি খাতে বাংলাদেশের দক্ষ ও অদক্ষ কর্মীর চাহিদা বেশি। বাংলাদেশ-মিসর দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হলে নতুনভাবে কর্মী আসার সম্ভাবনা খুবই বেশি।
ভালো সংবাদঃ মিসরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রয়োজনে কি ধরণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে? ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা অবসানে কি ধরণের উদ্যোগ আপনারা নিচ্ছেন?
প্রথম সচিবঃ মিসর প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভিসা জটিলতা, বৈধ পথে রেমিট্যান্স বাংলাদেশে প্রেরণের লক্ষে মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কেন্দ্রিয় ব্যাংকের গভর্নরের সাথে বৈঠক করা হয়।
ভালো সংবাদঃ বিশেষ করে মিসর প্রবাসী বাংলাদেশিদের কল্যাণে আপনাদের কি কি কর্মসূচি রয়েছে?
প্রথম সচিবঃ মিসরে যেসকল প্রবাসী বাংলাদেশি মৃত্যুবরণ করেন তাদের লাশ মালিক পক্ষের সাথে যোগাযোগ করে এবং ক্ষেত্র বিশেষ মালিক পক্ষকে চাপ প্রয়োগ করে মৃতদেহ তাঁর পরিবারের নিকট প্রেরণ করা হয়। করোনাকালীন কোভিড-১৯ এ মৃত্যুবরণকারী মৃতদেহ দেশে প্রেরণ করা সম্ভব না হওয়া এবং মৃতের নিকটআত্মীয়ের মৃতদেহ মিসরে দাফন করার ক্ষেত্রে আপত্তি না থাকায় দাফন করার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়। যেহেতু মিসরে প্রত্যেক পরিবারের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে পারিবারিক কবরস্থান রয়েছে সেজন্য বিচ্ছিন্নভাবে কারও লাশ দাফন করা প্রায় অসম্ভব। পরবর্তী অনুদান সংগ্রহের মাধ্যমে মিসরের উবর নামক স্থানে ৬০ বর্গমিটারের প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য কবরস্থান ক্রয় করা হয়। বর্তমানে প্রবাসী বাংলাদেশির লাশ দাফন করতে চাইলে দূতাবাসের মাধ্যমে শরিয়ত সম্মতভাবে দেশীয় প্রথায় উক্ত কবরস্থানে দাফন করা সম্ভব। তাছাড়াও বাংলা শিক্ষা, সংস্কৃতি কার্যক্রম চালুকরণের বিষয়ে তৎপরতা অব্যাহত আছে।
ভালো সংবাদঃ ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্যপদ বৃদ্ধির কোন কার্যক্রম রয়েছে কি? সদস্যপদের সুবিধাসমূহ কি?
প্রথম সচিবঃ বর্তমানে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্যপদ বৃদ্ধি করার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। যেসকল প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মী বৈধভাবে কাজ করছেন তাদেরকে সদস্যপদ নিবন্ধন করে নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে মিসরের বিভিন্ন এলাকায় কারখানা পরিদর্শন করে তাদেরকে সদস্যপদ অন্তর্ভুক্তির জন্য উৎসাহিত করা হয়। মিসরীয় ৮০০ পাউন্ড ব্যাংকে জমা প্রদানের মাধ্যমে মিসর প্রবাসী বাংলাদেশিদেরকে সদস্যপদ করা হয়। শুধু ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্যরা যেকোন বিপর্যয়ে তাদেরকে সহযোগিতা করা হয়। কোন সদস্য মৃত্যুবরণ করলে মৃতদেহ বাংলাদেশে বিমান বন্দরে পৌঁছামাএই ৩৫,০০০ টাকা মৃতের পরিবারকে দাফনের জন্য প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে পারিবারিক সহযোগিতা হিসেবে এককালীন ৩ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়। তাছাড়া পরবর্তীতে তাদেরকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হতে সহজ শর্তে ঋণ প্রদানসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা রয়েছে।
প্রথম সচিব (শ্রম) সম্পর্কেঃ মিসরে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মুহাম্মদ ইসমাইল হুসাইন বিসিএস ২৭ ব্যাচের একজন কর্মকর্তা। পুলিশ ক্যাডারের এই কর্মকর্তা মিসরের দূতাবাসে যোগ দেয়ার আগে ঢাকাস্থ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ইমিগ্রেশনে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশন, মালিতে কাজ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে সমাজ কল্যাণ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।