Site icon World 24 News Network

মিসরে বাংলাদেশি প্রবাসীদের নিজস্ব কবরস্থান ক্রয় করে দিলেন এক দানবীর

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রবাসে বাংলাদেশীদের মৃতদেহ নিয়ে বিড়ম্বনার শেষ নেই।

কোনো প্রবাসীর মৃত্যুর পর তার সাথে থাকা পরিবারের সদস্য, সহকর্মী এবং দুতাবাসকেও সেই ব্যক্তির লাশ দেশে পাঠাতে সব সময় হিমশিম খেতে হয়। নিয়োগদাতা যদি খরচ না দেন কিংবা প্রবাসী যদি বেকার ও অবৈধ থাকেন, তাহলে অনেক সময় দেশে থাকা পরিবারের সদস্যরাও টাকা খরচ করে লাশ আনতে অপারগতা প্রকাশ করে। এই টানাপোড়নে মাসের পর মাস হাসপাতালের হিমঘরে পরে থাকে রেমিটেনন্স যোদ্ধাদের লাশ, সেই করুন কাহিনী অনেকের কাছেই অজ্ঞাত রয়ে যায়। অনেকে আবার বিদেশ-বিভুঁই অপরিচিত অজ্ঞাত স্থানে স্বজনদের কবরস্থ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। যদি এককভাবে শুধুমাত্র বাংলাদেশীদের জন্য নির্ধারিত স্থায়ী জায়গা পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে আত্মীয়-স্বজন মানসিকভাবে স্বস্তিবোধ করেন- এই প্রত্যাশা থেকে কবরস্থান স্থাপনের উদ্যোগটি নেয়া হয়েছে।

মিসরে বর্তমানে বৈধ/ অবৈধ মিলে বসবাস করছেন ১২ হাজারের মতো বাংলাদেশী প্রবাসী। তার মধ্যে বেশিরভাগই নিম্ন-আয়ের পোশাক শিল্পের শ্রমিক। কোভিড-১৯ মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত মিসরে বিভিন্ন কারণে জানা অজানা রোগে মৃত্যুবরন করেছেন ৪০ জনেরও অধিক প্রবাসী। তাদের লাশ পাঠাতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে মিসরস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসকে। আইনের জটিলতায় এবং স্থানীয় প্রথার কারণে এদেশে নিজস্ব কবর ছাড়া কাউকে দাফন করা সম্ভব নয়। মিসরের প্রত্যেক শহরে বসবাসকারী প্রতিটি পরিবারের রয়েছে একটি করে নিজস্ব কবরস্থান, যেখানে শুধু পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়কেই শুধু কবর দেয়া যায়।

দূতাবাসের বর্তমান রাষ্ট্রদূত জনাব মনিরুল ইসলাম ভাবতে থাকেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের মৃত্যুর পর যাদের আর্থিক সঙ্গতি নেই বা অবৈধতার কারণে স্বদেশে পাঠানোর বিপুল খরচ কেউ বহন করতে চায় না, তাদের লাশ দেশে না পাঠিয়ে কিভাবে তাদের পরিবারের সম্মতিতে এখানে দাফন করা যায়। রাষ্ট্রদূত এ নিয়ে বাংলাদেশ কমিউনিটির কয়েকজনের সাথে কথা বলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক প্রবাসী এগিয়ে আসেন মৃত বাংলাদেশী প্রবাসীদের জন্য নিজস্ব একটি কবরস্থান ক্রয় করে দিতে।

রাজধানী কায়রোর নিকটবর্তী অবুর শহরে সরকারিভাবে নির্ধারিত বিশালাকার ‘দারুল হক’ কবরস্থানের একটি সামান্য অংশবিশেষ ক্রয় করে দেন তিনি। সেখানে দুতাবাসের তত্ত্বাবাধনে বাংলাদেশী প্রথা অনুযায়ী শরিয়ত সম্মতভাবে দাফনের কার্য সম্পন্ন করা হবে।

গত বুধবার (৮ই সেপ্টেম্বর ২০২১) দুতাবাসের অফিস কক্ষে রাষ্ট্রদূত জনাব মনিরুল ইসলামের উপস্থিতে কবরস্থানের জমি ক্রয়ের জন্য দুইপক্ষ দলিলে স্বাক্ষর করেন। এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, মিশরে বসবাসকারী যে কোনো প্রবাসীর মৃত্যুর পর তাদের পরিবার, সহকর্মী ও নিয়োগদাতা দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ সাপেক্ষে উক্ত কবরস্থানে দাফন কার্য সম্পাদন করতে পারবেন।

রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, কবরস্থানের জায়গা ক্রয়ের জন্য মিসর প্রবাসী একজন বাংলাদেশী নাগরিক সম্পূর্ণ খরচ বহন করেছেন, যিনি তার নাম গোপন রাখার অনুরোধ করেছেন।

Exit mobile version