মিসরের রাস্তায় পাওয়া গেল মানসিক রোগাক্রান্ত এক প্রবাসী। আইওএম- এর সহযোগিতায় চিকিৎসা শেষে পরিবারের কাছে ফেরত পাঠাল বাংলাদেশ দুতাবাস।
সংসারে সচ্ছলতার আশায় ও জীবিকার তাগিদে মিসর এসেছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা, বাঞ্ছারামপুর উপজেলা, পূর্বহাটি গ্রামের বাসিন্দা বাদল মিয়া। কিছুদিন পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে চাকরি ছেড়ে ঘুরতে থাকেন রাজধানী কায়রোর বিভিন্ন রাস্তায়। নিজেকে কখনও বাংলাদেশি কখনও ইন্ডিয়ান বা কখন শ্রীলঙ্কান বলে দাবী করেন তিনি।
মোহাম্মদ ইউসুফ নামক জনৈক মিসরীয় ব্যক্তি কায়রোস্থ বাংলাদেশ দুতাবাসে ফোন করে বাদল মিয়ার বর্ণনা দিলে মান্যবর রাষ্ট্রদূতের নির্দেশে দুতাবাসের শ্রম বিভাগের কর্মকর্তারা ছুটে যান এবং কথা বলে নিশ্চিত হন সে বাংলাদেশের একজন নাগরিক। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে তারা জানতে পারেন বাদল মিয়া আওয়াল গামাল নামক স্থানে অবস্থিত ডাইস পোশাক শিল্পে কর্মরত ছিলেন এবং অনেক বছর আগে চাকরী ছেড়ে চলে যান। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে একটি মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসতে চাইলে সে চিকিৎসার নিতে এমনকি সে দেশে যেতেও অস্বীকৃতি জানায়। পরবর্তিতে অনেক দিন যাবত চেষ্টা করেও বাদলের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছিল না।
দুতাবাসের শ্রম সচিব মুহাম্মদ ইসমাঈল হুসাইন বলেন, বেশ কিছুদিন পর আমরা আবার বাদলকে ভারসাম্যহীন অবস্থায় পাই এবং তাকে জোর পুর্বক আল-আব্বাবাসিয়া মানসিক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার বাদলকে চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন মানসিক অসুস্থ এই বিদেশী নাগরিক কে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করতে হলে থানা বা কোর্টের মাধ্যমে হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে ও এবং যাবতীয় চিকিৎসা খরচ রোগীকে বহন করতে হবে। ডাক্তার এর পরামর্শ অনুযায়ী বাদলকে নিয়ে আল-নুজহা থানায় গেলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, আমরা শুধু আসামী সংক্রান্ত বিষয়ে হাসপাতালকে সহযোগিতা করে থাকি, অন্য কোন বিষয়ে নয়।
শ্রম সচিব আরো বলেন, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও হাসপাতালে ভর্তি করাতে ব্যর্থ হয়ে মান্যবর রাষ্ট্রদূত কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনা অনুযায়ী অসুস্থ প্রবাসী শ্রমিক বাদলের চিকিৎসার জন্য মিসরস্থ (আইওএম) আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থার সহযোগিতা চাই। আইওএম কর্মরতা ডঃ হাতেম ও জনাব ইব্রাহিম এর যৌথ উদ্যোগে বাদলের চিকিৎসা ও দেশে ফেরত পাঠাতে ও তার সমস্ত ব্যয়ভার গ্রহনে সম্মতি হয়ে পাসপোর্ট ও আউটপাস প্রদান করতে দুতাবাসকে অনুরোধ করেন।
অবশেষে আসর-ঈল- মা’দী নামক একটি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে তাকে চিকিৎসা দিয়ে ও পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে গতকাল বুধবার (৮ই সেপ্টেম্বর ২০২১) বিশেষ বিমান যোগে আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থার একজন চিকিৎসক সহ বাদল তার জন্মভূমির উদ্দেশ্য রওনা হন।
মিসরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জনাব মনিরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, বহু চেষ্টার পর একজন মানসিক রোগাক্রান্ত প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিক’কে চিকিৎসা শেষে তার পরিবারের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি। তিনি আরো বলেন, বাদলের বিমান ভাড়াসহ যাবতীয় খরচ বহন করেছে আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা।