শিক্ষাব্যবস্থাকে দুটিভাগে বিভক্ত করা যায়। এক. প্রাতিষ্ঠানিক, দুই. অপ্রাতিষ্ঠানিক। প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা বলতে আমরা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদানকে বলতে পারি। এসব প্রতিষ্ঠানে সামাজিক ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের নানাবিধ বিষয় শিক্ষা দান করা হয়।
আমাদের দেশে পাঠদান পদ্ধতি হিসেবে মাতৃভাষা বাংলা ও ইংরেজি চালু রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষাদান পদ্ধতি। সেখানে আরবির প্রাধান্যের পাশাপাশি বাংলা ও ইংরেজিও রয়েছে। আমরা বিশাল জনঅধ্যুষিত এক উন্নয়নশীল দেশ। বিশ্বে উন্নত সকল দেশসমূহ শিক্ষাদান পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণ করেছে তাদের মাতৃভাষাকে।
তাই আমাদের শিক্ষার্থীরা যখন উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য বিদেশে যায় তখন তাদেরকে সবার আগে সেসব দেশের ভাষা শিখতে হয়। যেমন জার্মান, চাইনিজ, রাশিয়ান, জাপানি বিভিন্ন দেশের ভাষা শেখার পরে যায় বা সেদেশে ছয় মাস/এক বছর ভাষা শেখায় ব্যয় করতে হয়। কিন্তু আমরা পারি না। ভাষার মাস আসলে সবাই একটু নড়েচড়ে বসে।
মানুষকে সচেতন করার জন্য বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন এবং আলোচনা সভা ও সেমিনার- সিম্পোজিয়ামের ব্যবস্থা করা হয়।
আমাদের দেশে বর্তমানে যে ব্যবস্থাপনা (বাংলা, ইংরেজি ও আরবি) চালু রয়েছে সেটিই বাস্তবতা। শহরগুলোয় ইংলিশ মিডিয়ম স্কুলের আধিক্য এবং বাংলা ও ইংলিশ ভার্সন স্কুলের প্রসার প্রমাণ করে নিতান্ত প্রয়োজনের তাগিদেই মানুষ এসব প্রতিষ্ঠানের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। লেখাপড়া বা কর্মসংস্থানের জন্য মানুষ এখন বিদেশমুখী।
এছাড়াও রাজনৈতিক অস্থিরতা ও শান্তি-শৃঙ্খলার অবনতিও বিদেশমুখী হওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম দায়ী। বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে ইংরেজি ও আরবি ভাষাজ্ঞান (Spoken English & Arabic) জরুরি। আমাদের গ্রামের নিরক্ষর ও স্বল্পশিক্ষিত মানুষ মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে এবং আয় উপার্জন করে বেশ সচ্ছলতার সাথে জীবন যাপন করছে।
তবে এটা ঠিক, একজন ফিলিপাইন বা ভারতীয় নাগরিক যে পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে সেই তুলনায় আমাদের দেশের নাগরিক অনেক কম পেয়ে থাকে। এর অন্যতম কারণ ভাষাজ্ঞান। আমার নিজের উপলব্ধি, নিতান্ত প্রয়োজনই মানুষকে বিদেশী ভাষা শিখতে বাধ্য করছে।
আমাদের প্রয়োজন গুণগত ও নৈতিক শিক্ষা। আমাদের দেশের অনেক উচ্চপদস্থ আমলা ও কর্মকর্তা নৈতিক দিয়ে একেবারে অধপতিত। তারা ঘুষ-দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। দুর্নীতি আমাদের সকল সম্ভাবনা ধ্বংস করে দিচ্ছে। মাদ্রাসা ব্যতীত আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৈতিক শিক্ষার কোনো সুযোগ নেই। শিক্ষার মান মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। মাতৃভাষার উৎকর্ষতা ছাড়া গুণগত ও নৈতিক শিক্ষা প্রদান সম্ভব নয়। দেশে উচ্চবিত্ত শ্রেণির সংখ্যা খুবই সীমিত।
সাধারণ মানুষকে শিক্ষার আওতায় আনতে হলে প্রয়োজন মাতৃভাষায় শিক্ষাদান ও শিক্ষাকে সহজ ও আনন্দঘন করা। এখানেই আমরা ব্যর্থ। উচ্চশিক্ষা সীমিত করে কর্মমুখি ও নৈতিক শিক্ষার প্রসার ঘটানো দরকার এবং সেটি করতে হলে অবশ্যই মাতৃভাষা চর্চার ওপর গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।
আমাদের দেশে নৈতিক শিক্ষার পুরোটায় বলা যায় অপ্রাতিষ্ঠানিক। অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বলতে জুমা ও ঈদগাহে বক্তৃতা, বিভিন্ন সভা-সমাবেশে আলোচনা, বইপত্র, পত্রিকা, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, ইউটিউব, ফেসবুকসহ নানা অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষাদান। এসব ক্ষেত্রে মাতৃভাষার গুরুত্ব অপরিসীম।
নৈতিকভাবে অধপতিত এই সমাজে মানুষকে চরিত্রবান নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য দ্বীনমুখী শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। আশার দিক, মানুষ ক্রমান্বয়ে তার সন্তানদেরকে কুরআনে হাফেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষা দানের দিকে ঝুঁকছে। এগুলোও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য না পাওয়ায় তেমন বিকশিত হতে পারছে না।
( চলবে .. )