দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর মিশরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ‘মুআদালায়ে সানাবিয়ায়ে আম্মা’ সম্পন্ন করল রাজধানী উত্তরার স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল আরকাম আল ইসলামিয়া।
‘মুআদালা’র বিষয়ে দারুল আরকাম আল ইসলামিয়া’র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক শায়খ সানাউল্লাহ আজহারী আওয়ার ইসলাম কে জানান, ইতোপূর্বে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ‘মুআদালা’ করলেও সেগুলোর চুক্তির সময় শেষ হয়ে গিয়েছে। যেমন হাটহাজারী মাদ্রাসা ও পটিয়া মাদ্রাসা আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ‘মুআদালা’ করেছিল। আমরা বাংলাদেশি আজহারগামী ছাত্রদের কথা মাথায় রেখে নানা প্রচেষ্টায় নতুন করে এই ‘মুআদালা’ সম্পন্ন করি।
‘হাটহাজারী মাদ্রাসা এবং পটিয়া মাদ্রাসা আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যে ‘মুআদালা’ করেছিল সেটি ছিলো একটি সীমাবদ্ধ ‘মুআদালা’। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্ররা আযহারে গেলে শুধু উলুমুদ্দীন-এর প্রথম বর্ষে ভর্তি হতে পারত। কিন্তু আমরা যে চুক্তিটি সম্পন্ন করেছি এটি কোন সীমাবদ্ধ চুক্তি নয়। আমাদের এখান থেকে সানাবিয়া (শরহে বেকায়া) শেষ করে কোন ছাত্র যদি আজহারে ভর্তি হতে চায় তাহলে কোন ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই আজহারের যেকোনো অনুষদে ভর্তি হতে পারবে’- বলেন শায়খ সানাউল্লাহ আজহারী।
আযহারের সঙ্গে এমন যুগান্তকারী একটি চুক্তি কেন সম্পন্ন করলেন জানতে চাইলে তিনি জানান, আমাদের বাংলাদেশ থেকে কেউ আজহারে যেতে চাইলে দেখা যায় তারা দাওরায়ে হাদিস পাশ করার পর কিংবা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে আলিম কামিল পাশ করার পর মিশরে যায়। সেখানে গিয়ে যখন আজহার এ ভর্তি হওয়ার জন্য মাহাদে ভর্তি হয়ে সার্বিক বিষয় সম্পন্ন করে; তখন দেখা যায় যে তাদের বয়সের সঙ্গে অন্যান্য দেশ থেকে আসা ছাত্রদের বয়সের অনেক ডিফারেন্স।
তিনি বলেন, প্রায় ১২০ থেকে ১৩০টি দেশ থেকে মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা পড়তে আসে। যারা সেখানে পড়তে আসে সবার বয়সই স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের ছাত্রদের দেখা যায় দাড়ি উঠে গেছে এবং বয়সের একটা ভারত্ব চলে এসেছে। যার ফলে তারা সেই বয়সে গিয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি অন্যান্য চিন্তা মাথায় চলে আসে এবং ঠিকভাবে পড়াশোনা করতে পারে না।
শায়খ সানাউল্লাহ আজহারী বলেন, তাছাড়া ওই বয়সে যখন তারা দেশের বাইরে লেখাপড়া করতে যায় তখন পরিবার থেকেও তাদের কাছে একটি আর্থিক সাপোর্ট এর আশা করে থাকে। অথচ সে সেখানে যায় তারা লেখাপড়া করার জন্য। সবকিছু মিলিয়ে সে ছাত্রের লেখাপড়ায় অনেক বিঘ্নতা হয়। তাই আমরা চাচ্ছি বাংলাদেশ থেকে (শরহে বেকায়া) শেষ করে যেন ছাত্ররা ঠিক বয়সে সেখানে গিয়ে লেখাপড়া করতে পারে।
‘আমি মিশর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার জন্য যায় ২০০৮ সালে। তখন আমাদের দেশের কোন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ‘মুআদালা’ ছিল না। সেজন্য আমাদেরকে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। সেখানে গিয়ে মা’হাদ পড়াসহ বিভিন্ন ফর্মালিটি শেষ করতে গিয়ে আমাদের অনেক সময় ক্ষেপণ হয়েছে। আগামীতে যারা আজহারে পড়তে চায় তাদের যেন এই ভোগান্তিতে না পড়তে হয় সেজন্যই এই উদ্যোগ গ্রহণ করা’- জানান শায়খ সানাউল্লাহ আজহারী।
দারুল আরকাম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসা কোন কোন সিলেবাসে পরিচালিত হবে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমাদের প্রতিষ্ঠানটি দরসে নেজামী এবং আজহারের সিলেবাস এর সমন্বয়ে পরিচালিত হচ্ছে। ছাত্ররা দরসে নেজামীর কিতাব এবং আরবির প্রতি অনেক অভিজ্ঞ হয়ে গড়ে উঠছে। আশা করছি এখান থেকে শরহে বেকায়া (সানাবিয়া) পড়ে ছাত্ররা যখন আজহারে ভর্তি হতে যাবেন; তখন তারা নির্দ্বিধায় সেখানে ভর্তি হতে পারবেন।
আজহার থেকে আমাদেরকে যখন জানানো হয়েছিল যে আমাদের ‘মোআদালা’টি সম্পন্ন হয়েছে; তখন আমরা এম্বাসী থেকে সার্বিক কাগজপত্র বুঝে পাওয়ার আগেই কিন্তু একটি ব্যাচ সেখানে ভর্তির জন্য পাঠিয়েছিলাম। তারা কোন রকম বাঁধাবিঘ্নতা ছাড়াই আলহামদুলিল্লাহ আজহার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হয়ে এখন সেখানে লেখাপড়া করছে’-জানান শায়খ সানাউল্লাহ আজহারী।
প্রসঙ্গত, মিশরের আলআজহার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক দারুল আরকাম আল ইসলামিয়া ঢাকাকে স্বীকৃতি প্রদান উপলক্ষে আজ (১৯ ডিসেম্বর) এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানটি রাজধানীর জসিমউদ্দীন এভিনিউ সংলগ্ন দ্য ক্যাফে রিও-তে অনুষ্ঠিত হবে।
শায়খ সানাউল্লাহ আজহারীর সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন আলহাইয়াতুল উলিয়ার কো-চেয়ারম্যান আল্লামা সাজিদুর রহমান, ঢাকা-১৮ আসনের সাংসদ জনাব আলহাজ্ব হাবীব আহসান, ঢাকা উত্তর সিটি ৫৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জনাব মোহাম্মদ শরীফুর রহমান। এছাড়া উপস্থিত থাকবেন দেশবরেণ্য ওলামায়ে কেরাম ও জনপ্রতিনিগণ।