ঐতিহাসিক আল-আযহার মাসজিদ ও বিশ্ব বিদ্যালয়ের ১০৮২ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী
৭ই রামাদান মিসরে পালিত হল আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠান
“জামে উল আযহার” বা আল আযহার মসজিদ। প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ৩৬১ হিজরীর ৭ই রমাদনের এই দিনে (মিশরী ক্যালেন্ডার অনুযায়ী)। আজ থেকে প্রায় ১০৮২ বছর পূর্বে। এই মসজিদের প্রাঙ্গন থেকেই শুরু হয় স্বপ্ন ও সাধনার বিদ্যাপীঠ জগৎবিখ্যাত “জামেয়াতুল আযহার” বা আল আযহার ইউনিভার্সিটির পথচলা।
ইসলামি শিক্ষায় ইলমের কা’বা নামে প্রসিদ্ধ বিশ্বের দ্বিতীয় আর আজো পর্যন্ত টিকে আছে হিসেবে প্রাচীনতম প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হল আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়। আজকে আমাদের মাঝে এটি বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত হলেও তার শুরুটি ছিল একটু অন্যরকম। তা হচ্ছে মসজিদ কেন্দ্রিক পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা ব্যবস্থা চালুকরণ।
সেই মসজিদ আজো বর্তমান। কালের সাক্ষী হয়ে আছে। আর জানান দিচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থার সুদীর্ঘ কালের ইতিহাস। ৯৭১ খ্রিঃ ফাতেমী শাসকদের হাতে এই মসজিদ নির্মিত হয়। আর বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আল আযহারের যাত্রা শুরু হয় ৯৮৮ খ্রিঃ। ফাতেমী সুলতান, খলিফাতুল মুসলিমিন, মুঈজ লি দিনিল্লাহ এর শাসন আমলে, তার উজির জওহার আস-সিকিলির হাত ধরেই নির্মিত হয়, জ্ঞানের এই প্রজ্জ্বলিত প্রদীপটির। শুরুতে আল আযহার মসজিদকে কেন্দ্র করেই পড়াশোনার একটি পরিবেশ গড়ে উঠে। কিন্তু প্রাথমিক সময়ের শিক্ষা দীক্ষা ছিল শিয়াদের হাতে পরিচালিত। শিয়া মাজহাবকে কেন্দ্র করে।
কিন্তু যখন সুলতান সালাহুদ্দিন আল আইয়ুবী (রঃ) মিশরে আসলেন তখন তিনি শিয়া মাজহাবের প্রচার ও প্রসারের মুল কেন্দ্র হওয়াতে এটাকে বন্ধ করে দিলেন। এ অবস্থায় দীর্ঘকাল অতিবাহিত হয় পরবর্তীতে এটাকে আবার উম্মুক্ত করা হয় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এর আকিদার প্রচার প্রসারের লক্ষ্যে। তখন থেকে আযহারের প্রসিদ্ধি পুরো পৃথিবীর মানুষ জানতে পারে।
পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বড় বড় আলেমরা আযহারে জমায়েত হতে থাকেন। সেই সাথে জ্ঞান পিপাসা নিবারণের লক্ষ্যে সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা ছাত্ররাও ভিড় জমাতে শুরু করে আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ে। তখন থেকে শুরু হয় আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি ছাত্রদের পদচারনা। তারই ধারাবাহিকতা আজো বর্তমান আছে। বিশ্বের ১২০ এরও অধিক দেশ থেকে ছাত্র ছাত্রারীরা মিসরে পড়তে আসে। এখানে ইসলামিক, মেডিসিন, ইঞ্জিনিয়ারিং ও বিজনেস এ্যাডমিনিষ্ট্রেশন সহ প্রায় ৮৯টি ফ্যাকাল্টি আছে।
তবে আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল যে এখানে যে পরিমান ইসলামিক ফ্যাকাল্টি আছে সে পরিমাণ ইসলামিক ফ্যাকাল্টি পৃথিবীর আর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই।। উল্লেখ্য আল-আযহার প্রতিষ্ঠা লাভ করে ইংরেজি পঞ্জিকা অনুযায়ী ৯৭০ থেকে শুরু ৯৭২ খ্রিস্টাব্দে শেষ।
যেখানে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ১০৯৬ খ্রিস্টাব্দে এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ১২০৯ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়। আজো সারাবিশ্বের ইসলামী শিক্ষায় শ্রেষ্ঠত্বের ধারক ও বাহক হয়ে আছে মিশরের সর্বজনবিদিত আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়। বিশেষত মুসলিম বিশ্বের যে কোন ইউনিভার্সিটির মতধারা বা ভাবধারার চেয়ে অনেক বেশি ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর জন্য নিবেদিত পরিচয়ের নাম হচ্ছে প্রিয় আল-আযহার।
এর সাফল্যের মূল রহস্য হচ্ছে আল-আযহার সুফীবাদ ও মধ্যমপন্থী ভাবধারায় পরিচালিত। যেখানে বিশ্বের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হাজারো ইখতিলাফ, নতুন মতবাদের প্রচার প্রসার, ছাত্র রাজনীতি সহ নানান সমস্যায় জর্জরিত। ঠিক এমন পরিস্থিতে আল-আযহার মুসলিম উম্মাহর জন্য সঠিক ও সর্বাধুনিকতার রোল মডেল। ধর্মীয় গোড়ামী কিংবা উস্কানিমূলক কোন কার্যক্রমে আযহারের সম্পৃক্ততার কোন সুযোগ নেই।
তাইতো শুরু থেকে অদ্যবধি মুসলিম বিশ্বের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিক থেকে রোল মডেল হয়ে আছে Al-Azhar University | جامعة الأزهر কা’বাতুল ইলম, ইসলামী সাহিত্য ও সাংস্কৃতির রাজধানী, হাজার বছরের প্রাচীন শিক্ষা নিকেতন, মিশরের ঐতিহাসিক আল-আযহার আশ-শরীফ।