বিদেশি ভাষা পাঠদানকারীর আন্তর্জাতিক মানদণ্ড
বিদেশী ভাষা শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে কিছু পদ্ধতি বা মানদন্ড নির্ধারণ করেছেন ভাষা বিশেষজ্ঞগণ, যাতে একজন বিদেশি ভাষা চর্চাকারী সেই ভাষাটি অন্যকে পাঠদানে সক্ষম হন। তদরুপ যারা শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট তাদের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন কার্যে আন্তজার্তিক সীমারেখা জানা আবশ্যক । অন্যথায় শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন ব্যাহত হবে। ভাষা শিক্ষার আন্তর্জাতিক মানদন্ড নির্ধারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে।
১. American Council on the Teaching of Foreign Languages তথা বিদেশি ভাষা শিক্ষাদানে আমেরিকান পরিষদ। (ACTFL)
২. Common European Framework of Reference for Languages তথা অন্যান্য ভাষার সাধারণ ইউরোপীয় কাঠামো। (CEFR)
৩. Teaching English to Speakers of Other Languages তথা অন্যান্য ভাষাভাষীদেরকে ইংরেজি ভাষা শিক্ষাদান। (TESOL)
৪. Australian Federation of Modern Language Teachers Associations তথা আধুনিক ভাষা শিক্ষক সমিতি অস্ট্রেলিয়ান সংঘ। (AFMLTA)
যিনি অপরিচিত ভাষা শিক্ষা দেবেন তাকে কি কি করতে হবে ?
সর্বাগ্রে তাকে ভাষা ও ভাষা সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় জ্ঞাত থাকতে হবে এবং তা প্রকাশের দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
শুনে বুঝতে পারা, শুদ্ধ পাঠন রীতি, লেখা এবং সাবলীল ভাবে বলার পরিপূর্ণ যোগ্যতা থাকা।
পাঠদান কারীকে আরো বুঝতে হবে ভাষার উপাদান, গঠন প্রণালী, পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিশোধন, অন্তর্নিহিত সাদৃশ্য, সাধু-চলিত, কথ্য-লেখ্য, ভাষার অলংকার ও শব্দের মিলন রীতির ব্যবহার।
যে ভাষাটি শিক্ষাদান করবেন তাকে সে ভাষার সাহিত্য ও সংস্কৃতি বুঝতে হবে; ভাষাটির উৎস জানা থাকা, প্রাচীন সাহিত্য এবং বর্তমান সাহিত্যের মিশ্রণ বোঝা।
শিক্ষককে আরো উদঘাটন করতে হবে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত। সে ভাষার সংস্কৃতি বুঝে ছাত্রদের জন্য নতুন কিছু ক্ষেত্র তৈরি করা।
ভাষা শিক্ষার বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম অনুশীলন চর্চা। পাঠদানকারীর পাঠ ও পাঠককে বুঝতে হবে; কিভাবে তাদের উন্নতি করা যায় স্তর বিন্যাসে।
শিক্ষা এবং পদ্ধতির ক্ষেত্রে মানদণ্ড পরিকল্পনা করা, যে পদ্ধতিতে পড়ালে তারা দ্রুত ফলপ্রাপ্ত হতে পারে। শিক্ষককে তার লক্ষ্য বুঝতে হবে যাতে দ্রুত ও সহজ উপায়ে তাদের উদ্দেশ্য পূর্ণ করতে পারে।
যিনি শিক্ষা দেবেন তাকে আরো খেয়াল রাখতে হবে কিভাব তিনি শুরু করবেন ও তার চালু রাখবেন মনোযোগ আকর্ষণ পদ্ধতি ও পাঠ শেষ করার কৌশল সমূহ।
ভাষা শিক্ষার্থীদের বয়সের তারতম্য অনুযায়ী পদ্ধতি ভিন্ন ভাবে গ্রহণ করা যেতে পারে কেননা দীর্ঘ সময় শিক্ষা থেকে দূরে থাকার কারণে তাদের স্তর ভিন্ন হতে পারে, আবার কারো গ্রহণ ক্ষমতা বেশি থাকতে পারে পুরোটা লক্ষ্য রাখা।
পাঠদানের সময় নতুন নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করা এবং তার তালিকা বা ফলাফল সংগ্রহ করা কতটুকু উন্নয়ন পরিলক্ষিত হল, সে বিষয় লিখে রাখা।
ছাত্রদেরকে প্রশ্ন করার সুযোগ দেয়া তাদের প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তর দেয়ার দক্ষতা রাখার জন্য শিক্ষককে সব সময় বর্তমান বিষয় ও ভিন্ন ভিন্ন কৌশল জানা থাকা আবশ্যক।
শিক্ষককে নতুন জ্ঞান বিজ্ঞানের সাথে সর্বদা সম্পৃক্ত থাকা যাতে ভাষার সাথে মিল করে নতুন কিছু পৌঁছাতে পারে।
অপরিচিত বা বিদেশি ভাষা শিক্ষার সুফল ও প্রয়োজন, সুযোগ সুবিধাবলী সম্পর্কে জানা ও শিক্ষার্থীদের জানানো।
ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় তাদের উপভোগ্য করাতে হবে। কেবল ভাষা গতই নয় বরং শিক্ষককে জ্ঞানী হওয়াও আবশ্যক যাতে তাঁর থেকে জ্ঞান আহরণ করে ভাষা শিক্ষার্থীগণ তৃপ্ত হতে পারে।
তাই সার্বিক জ্ঞান বিজ্ঞানে শিক্ষক নিজেকে সর্বাগ্রে পৌঁছে রাখবে। দক্ষতার সাথে পাঠদান চালাবে যাতে নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে সক্ষম হন।
যা কিছু জানবেন তা বাস্তবে প্রয়োগ করে ভাষাটি মজবুত ভাবে শিক্ষার্থীদের ভেতর সঞ্চার করবেন।
তাকে অর্জন ও বাস্তবায়নে সংঘাত প্রতিবন্ধকতা জেনে অন্যরকম গুরুত্ব দিয়ে ধরিয়ে দিতে হবে,যাতে মজবুত বা দৃঢ় ভাবে ভাষাটি ধারণ করতে পারে।
এছাড়াও শিক্ষকের পাঠদানের সময় এমন একটি পরিবেশ গঠন করতে হবে যেখানে পাঠক কেবলই পাঠে নিমগ্ন হয়ে পড়ে; একটি মনোরম স্থান যেখানে বস্তুগত ও অবস্তুগত উভয় দিক থেকে পরিশীলিত করে গড়ে তোলা।
চলমান পদ্ধতিতে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে পুরাতন নিয়মাবলি থেকে গুটিয়ে যুগের চাহিদা অনুয়ায়ী শেখান যাতে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে পাঠদান আরো সহজ ও বিকাশ করা যায় যেমন প্রোগ্রামিং, ইন্টারনেট, কম্পিউটার, প্রজেক্টের ব্যবহার করা যেতে পারে।
উপরোল্লিখিত বিষয়াবলী অর্জন, দক্ষতা এবং যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থাপনা মাথায় রেখে এগিয়ে গেলে বিদেশি ভাষা অর্জন সহজলভ্য হবে অন্যথায় শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যহত হবে এবং ভাষা শিক্ষার প্রতি আগ্রহ হারাবে যেটা উন্নতি অগ্রগতির অন্তরায় হয়ে থাকবে।