টিকা বাণিজ্যে অভিযুক্ত ‘হুইপ পোষ্য’কে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত
অবশেষে টিকা দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ‘হুইপ পোষ্য’ মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট রবিউল হোসাইনকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. এ বি এম খুরশিদ আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ডা. এ বি এম খুরশিদ আলম বলেন, ‘তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলেই পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ অভিযুক্ত রবিউলকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি। বিভাগীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি আইনি প্রক্রিয়ায় যাবেন কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের নির্দিষ্ট আইনজীবীর মতামত নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এদিকে, ‘হুইপ পোষ্যেরা’ এই অপবাণিজ্যে যুক্ত হওয়ার অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হবার পর প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীলরা। কেউ কেউ এখন গা এড়িয়েও চলছেন। অন্যদিকে, দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়ায় চাঞ্চল্যকর এই করোনা টিকা বাণিজ্য নিয়ে দাপ্তরিক ব্যবস্থার পাশাপাশি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ‘ঢিমেতালে’ অবস্থায় উদ্বেগ-অসন্তোষ দেখা দিয়েছে স্বাস্থ্য খাতের বিশেষজ্ঞ ও সচেতন নাগরিক প্রতিনিধিদের মধ্যে।
টিকা কিংবা রাষ্ট্রীয় সম্পদ সরকারি অনুমতি ছাড়াই স্থানান্তর ও প্রয়োগের নামে লোপাট, মজুদদারি কিংবা বাণিজ্যের অভিযোগে এখনো মামলা না হওয়ায় উদ্বেগ-অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নাগরিক সমাজ। মামলা প্রসঙ্গে অবশ্য দায়িত্বশীলরা বলছেন ভিন্ন কথা।
সোমবার করোনার টিকা কেলেঙ্কারি নিয়ে সৃষ্ট অভিযোগে তদন্ত কমিটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের পরিচালক বরাবর তাদের রিপোর্ট প্রদান করেন। কমিটি রাতেই সেই রিপোর্ট স্বাস্থ্যের মহাপরিচালক বরাবর কুরিয়ার করেন এবং মঙ্গলবার সকালে মেইল যোগে তা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয় বলেও সরকার সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গত সন্ধ্যায় সর্বশেষ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চট্টগ্রাম থেকে প্রেরিত ‘তদন্ত প্রতিবেদনটি’ হাতে পাননি এবং ‘মেইল পাওয়ার’ বিষয়টিও অবগত নন বলে জানান।
শুক্র ও শনিবারে পটিয়ার হুলাইন ইউনিয়নে হুইপ সামশুলের গ্রামের বাড়ি লাগোয়া অস্থায়ী ক্যাম্পে অনুমতিহীন টিকা প্রদান করা হয়। এই টিকা প্রদান উপলক্ষে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে হুইপের সম্মতিতে ব্যানার সাঁটানো হয় বিভিন্ন স্থানে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের কোনো এমপি সরকারি টিকা নিয়ে দলীয় কর্মসূচি না করলেও ‘হুইপ পোষ্যদের’ এমন আয়োজনে এলাকায় নানা প্রশ্ন ওঠে। টিকাদান কর্মসূচি পরিদর্শন করেন হুইপ নিজেই। তার ভাই মহব্বত নিজেই টিকা পুশ করেন। এমন ছবিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এই অবৈধ টিকা প্রদান প্রক্রিয়ায় অর্থ লেনদেনের অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, সিভিল সার্জন ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক বরাবরে যায়। আর এ নিয়ে খবর প্রকাশ হলে শুরু হয় তোলপাড়। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ডা. অজয় দাস এক প্রশ্নের জবাবে জানান, ২৬০০ টিকা প্রদানের জন্য রেজিস্ট্রেশন কার্ড হস্তান্তর করেন অভিযুক্ত রবিউল। তবে এর মধ্যে মাত্র ২১৮টি রেজিস্ট্রেশন কার্ড এর বৈধতা খুঁজে পায় তদন্ত কমিটি- এমনটি জানায় নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র।
ঘটনার পরপরই সরকারি টিকাদান প্রক্রিয়ায় অনুমতিহীন ও অস্বচ্ছতাসহ নানা ব্যত্যয়ের কথা স্বীকার করেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সব্যসাচী নাথ। কিন্তু তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জমা দেওয়ার পরে এই উপজেলা কর্মকর্তা নানা জনের হুমকি-ধমকিতে নিশ্চুপ হয়ে গেছেন! এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে নারাজ তিনি। এড়িয়ে চলছেন সংবাদমাধ্যমের ফোন।
তদন্ত রিপোর্ট প্রদানের পর চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বিও ‘দোষীদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না’ বলে প্রত্যয় জানান। কিন্তু গা এড়িয়েই যেন চলছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রথম দফাতেই মুঠোফোনে রেসপন্স করলেও টানা চারদিন অন্তত ১৫ বার ফোন করেও চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ারের কোনো রেসপন্স মেলেনি। তার কাছে জমা করা তদন্ত রিপোর্ট বিষয়েও তিনি মুখ খুলছেন না সংবাদমাধ্যমের কাছে।