নীলনদ আর পিরামিডের দেশ মিসরের রাজধানী কয়রোতে উদযাপন হলো বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী দিবস। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরকে স্মরণীয় করে রাখতে হেলিওপলিসের ব্যারন প্রাসাদে মিসরস্থ বাংলাদেশ ও ভারত দুতাবাস যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
গত সোমবার (৬ই ডিসেম্বর ২০২১) স্থানীয় সময় বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠানের শুরুতে মিসর, বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত সকল শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এ সময় আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও এতে ভারতীয় সহায়তা, ১৯৭১ সালে সংঘটিত গণহত্যা, বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণা, বিশ্ব গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রচারণা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনে তৎকালীন ভারত সরকারের ভূমিকা এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও উন্নয়ন সহযোগিতা তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বাংলাদেশের উন্নয়নের সূচনা, বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার উন্নয়নের অগ্রযাত্রা এবং বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে একটি ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। বাংলাদেশি ও ভারতীয় শিল্পীরা পৃথকভাবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মনিরুল ইসলাম, ভারতের রাষ্ট্রদূত অজিত গুপ্তে ও মিসরের পর্যটন উপমন্ত্রী মিস জাদা-শালবী বক্তব্য রাখেন।
রাষ্ট্রদূত মনিরুল ইসলাম তার বক্তব্যে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা, স্বাধীন বাংলাদেশের যুদ্ধবিধ্বস্ত প্রেক্ষাপটে ভারতীয় সহায়তা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব ও ইন্দিরা কর্তৃক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সুদৃঢ় ভিত্তি স্থাপনের বিষয়কে স্মরণ করেন। রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে নিবিড় যোগাযোগ এবং দু’দেশের সব ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করে বলেন, বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, উভয়ের বলিষ্ঠ ও গতিশীল নেতৃত্বে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও সুদূরপ্রসারী ও নতুন মাত্রা নেবে।
ভারতের রাষ্ট্রদূত অজিত গুপ্তে তাঁর বক্তব্যে বলেন, দুই দেশের মৈত্রীর সূচনা হয়েছিলো মহান মুক্তিযুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ের মাধ্যমে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ স্বীকার করে। ভারতের মান্যবর রাষ্ট্রদূত মুক্তিযুদ্ধের সময়কালের কথা স্মরণ করতে গিয়ে বলেন, তাঁর বাবাও সক্রিয়ভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৭১ সালের ০৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক কূটনীতিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে যে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী রচিত হয়েছিলো তা ভবিষ্যতে আরও বেগবান হবে এ মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রদূত জনাব অজিত গুপ্তে।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকবৃন্দ, সামরিক সচিব, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, মিসরের সামরিক ও বেসামরিক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাগন, দু’দেশের গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, শিক্ষাবিদ, মিসরে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি ছাত্র/ছাত্রী, বাংলাদেশি ও ভারতীয় প্রবাসী সহ তিন শতাধিক ব্যক্তি এ সময় উপস্থিত ছিলেন।