Site icon World 24 News Network

“আর্চ স্টিল সেতু” নির্মিত হচ্ছে মোমেনশাহীতে

ময়মনসিংহের কেওয়াটখালিতে নির্মাণাধীন স্টিল আর্চ ব্রিজের নকশা

দেশের প্রথম আর্চ স্টিল ব্রিজ নির্মিত হচ্ছে ব্রক্ষ্মপুত্র নদের উপর। ময়মনসিংহের কেওয়াতখালীতে এ ব্রিজ নির্মাণে খরচ হবে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্রিজটি নির্মাণের জন্য বাংলাদেশকে ২৬০ মিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন দিয়েছে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি)। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)।

দেখতে ঠিক ধনুকের মতো বলে কাঠামোর সঙ্গে মিলিয়ে নাম রাখা হয়েছে ‘আর্চ ব্রিজ’। দৃষ্টিনন্দন আর্চ ব্রিজগুলো যেমন নিরাপদ, তেমন টেকসই। পরিবেশের জন্যও কম ক্ষতিকর। লম্বা স্প্যান ব্যবহার করায় দুই পিয়ারের মধ্যে দূরত্ব থাকে বেশি। ফলে সেতুর নিচ দিয়ে যেকোনো ধরনের নৌযান চলতে পারে নির্বিঘ্নে। তা ছাড়া নির্মাণে সময়ও কম লাগে। এসব কারণে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে এখন আর্চ ব্রিজই বেশি নির্মিত হচ্ছে।
ব্রিজ নির্মাণে বাংলাদেশে ‘আর্চ স্টিল’ পদ্ধতিটি নতুন হলেও আর্চ পদ্ধতিটি নতুন নয়। ঢাকার হাতিরঝিল ও পূর্বাচলে আর্চ পদ্ধতিতে একাধিক কংক্রিটের ব্রিজ নির্মিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নদীমাতৃক বাংলাদেশে ব্রিজ নির্মাণের জন্য ‘আর্চ স্টিল’ পদ্ধতি সবচেয়ে আদর্শ। কারণ আর্চ স্টিল ব্রিজ দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্মাণ করে ফেলা যায়। নির্মাণ ব্যয় যেমন কম, তেমনি খুব বেশি খরচ নেই রক্ষণাবেক্ষণেও। নির্মাণ পদ্ধতি কিছুটা জটিল হলেও নিরাপদ ও টেকসই অবকাঠামো হিসেবে বিশ্বজুড়েই সমাদৃত ‘আর্চ স্টিল’ ব্রিজ।

সওজ সূত্রে জানা গেছে, ময়মনসিংহের কেওয়াতখালীতে নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া বাংলাদেশের প্রথম আর্চ স্টিল ব্রিজের দৈর্ঘ্য ৩২০ মিটার। এর সঙ্গে একাধিক ওভারপাস এবং ধীরগতির যানবাহন চলাচলের জন্য আলাদা লেনসহ ছয় কিলোমিটারের বেশি চার লেন মহাসড়ক নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প তৈরি করেছে সওজ অধিদপ্তর। প্রকল্পের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

সওজ অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা জানান, কেওয়াতখালী ব্রিজের সুপারস্ট্রাকচার স্থাপনের জন্য বড় ব্লক বা ছোট ব্লক পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। পিয়ারের সংখ্যা হবে দুটি। দুটি পিয়ারই হবে নদীর দুই তীরে। নদীর তীর এলাকা কর্দমাক্ত হওয়ায় পিয়ার নির্মাণে ব্যবহার করা হবে ‘কফার ড্যাম’ পদ্ধতি। দুই পিয়ারের ওপর একটিই স্প্যান বসানো হবে। স্প্যানটির দৈর্ঘ্য হবে ১৮০ মিটার।

এআইআইবির হিসাবে কেওয়াতখালী ব্রিজটি নির্মাণে সব মিলিয়ে খরচ হতে পারে ৩৬৬ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ২৬০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ এরই মধ্যে অনুমোদন করেছে সংস্থাটি। বাকি ১০৬ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলারের সংস্থান করতে হবে বাংলাদেশকে। ব্রিজটি নির্মাণ করতে সব মিলিয়ে সাড়ে চার বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছে এআইআইবি। প্রস্তাবিত বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে চলতি বছরের মার্চ থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ব্রিজটি নির্মিত হলে তা ময়মনসিংহ শহরে যানজট কমানোর পাশাপাশি ঢাকা-ময়মনসিংহ-ভারত সীমান্ত করিডোরের অংশ হবে। স্থানীয় ও আঞ্চলিক যোগাযোগ উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে ব্রিজটি।
যেকোনো নদীতে ব্রিজ নির্মাণের ক্ষেত্রে ‘আর্চ স্টিল’ পদ্ধতিকে সবচেয়ে আদর্শ হিসেবে অভিহিত করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. হাদিউজ্জামান। তিনি বলেন, আর্চ ব্রিজের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এতে লম্বা স্প্যান ব্যবহার করা যায়। এজন্য ব্রিজের জন্য খুঁটির সংখ্যা কম লাগে। দুই খুঁটির মধ্যে বড় বড় নৌযান চলাচলের উপযোগী করে দূরত্ব রাখা সম্ভব হয়। আর আর্চ স্টিল ব্রিজ হয় তুলনামূলক হালকা। ফলে এটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে এবং কম খরচে নির্মাণ করা যায়। পাশাপাশি এ ধরনের ব্রিজ দৃষ্টিনন্দনও হয়।

বাংলাদেশে বহুল ব্যবহৃত প্রি স্ট্রেস আই গার্ডার বা বক্স গার্ডার ব্রিজের চেয়ে ‘আর্চ স্টিল’ ব্রিজের নির্মাণ পদ্ধতি কিছুটা জটিল বলে জানিয়েছেন প্রফেসর হাদিউজ্জামান। তিনি বলেন, এ ধরনের ব্রিজ নির্মাণে অনেক অভিজ্ঞ প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের প্রয়োজন হয়। ফলে শুরুর দিকে এ ধরনের ব্রিজের নির্মাণ ব্যয় বেশি হয়ে যায়। বাংলাদেশে যত বেশি আর্চ স্টিল ব্রিজ নির্মাণ হবে, তত বেশি সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ ঠিকাদার ও প্রকৌশলী তৈরি হবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরনের ব্রিজের নির্মাণ ব্যয়ও কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

দেশের প্রথম আর্চ স্টিল ব্রিজ সম্পর্কে সওজ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সবুর বলেন, নির্মিতব্য ব্রিজটির অবস্থান ময়মনসিংহ শহরের ঠিক পাশেই। শহরের পাশে একটি দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামো গড়ে তোলা এ প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য। পাশাপাশি এটি হতে যাচ্ছে নতুন প্রযুক্তির ব্রিজ। ভবিষ্যতে এ ধরনের আরো ব্রিজ নির্মাণের ক্ষেত্রে এ প্রকল্পটি অগ্রণী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে মনে করেন তিনি।

সংগৃহীত
সিডনি হারবার
Exit mobile version