মাগফেরাত ও নাজাতের মাস রমজান (২)
রমজান মাসেই কুরআন নাজিল হয়েছে যা মানবজাতির জন্য হেদায়াত।
- উক্ত আয়াতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, যেহেতু রমজান মাসে মানুষের হেদায়াতের জন্য কুরআন নাজিল করা হয়েছে সেহেতু যারাই এই মাসটি পাবে তাদের জন্য পূর্ণ মাস রোজা রাখা অপরিহার্য। কুরআন মানার জন্য যে জিনিস অপরিহার্য সেটি হলো তাকওয়া। রোজা মানুষের মধ্যে তাকওয়ার গুণ সৃষ্টি করে। আল্লাহর বাণী, ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যাতে তোমাদের মধ্যে তাকওয়ার গুণ সৃষ্টি হয়’- সুরা বাকারা ১৮৩। আল্লাহপাক কুরআন মজিদের শুরুতে বলেছেন, এই কুরআন মুত্তাকিদের জন্য হেদায়াত। তাকওয়া অর্থ আল্লাহর ভয়ে নাফরমানিমূলক সকল কাজ থেকে দূরে থাকা। কাঁটাযুক্ত পথে চলতে গেলে মানুষ তার কাপড় গুটিয়ে যেভাবে অতি সন্তর্পণে চলে তারই নাম তাকওয়া (ওমর রা.-এর প্রশ্নের জবাবে সাহাবি উবাই ইবনে কাব রা. বলেছিলেন)।
পরীক্ষা গ্রহণের পর আল্লাহপাক আদম আ.-কে পৃথিবীতে চলে আসতে বলেন এবং জানিয়ে দেন, তাঁর পক্ষ থেকে হেদায়াত যাবে যারা তা অনুসরণ করবে তাদের কোনো ভয় নেই। আদম আ. প্রথম মানুষ ও প্রথম নবি এবং তাঁদেরকে নিষ্পাপ অবস্থায় শিক্ষাদীক্ষা ও জ্ঞানবিজ্ঞানে সমৃদ্ধ অবস্থায় দুনিয়াতে প্রেরণ করা হয়। জ্ঞান ও বিবেক-বুদ্ধির পাশাপাশি আল্লাহর পক্ষ থেকে যুগে যুগে অসংখ্য নবি-রসুলের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা হেদায়াত দান করেছেন এবং সর্বশেষ নবি ও রসুল হলেন আমাদের প্রিয়তম নবি মুহাম্মদ সা. ও সর্বশেষ হেদায়াত হলো মহাগ্রন্থ আল কুরআন। আল্লাহপাক এই কুরআনকে নাজিল করেন রমজান মাসের এক মহিমান্বিত রজনিতে। কুরআনের কারণে রাত্রিটি হয়েছে হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম এবং রমজান মাস হয়েছে অসংখ্য রহমত, মাগফেরাত ও বরকতে ভরপুর।
আল্লাহর ভাষায় কুরআন নাজিল হয়েছে রমজান মাসে এবং সেটি সমগ্র মানবজাতির জন্য হেদায়াত -‘রমজান মাস, এ মাসেই কুরআন নাজিল হয়েছে, যা মানবজাতির জন্য হেদায়াত, এমন দ্ব্যর্থহীন শিক্ষাসম্বলিত, যা সত্য-সঠিক পথ দেখায় এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য সুস্পষ্ট করে দেয়। কাজেই এখন যে ব্যক্তি এ মাসের সাক্ষাত পাবে তার জন্য পূর্ণ মাস রোজা রাখা অপরিহার্য এবং যে ব্যক্তি রোগগ্রস্ত হয় বা সফরে থাকে, সে যেন অন্য সময় রোজার সংখ্যা পূর্ণ করে। আল্লাহ তোমাদের সাথে নরম নীতি অবলম্বন করতে চান, কঠোরতা অবলম্বন করতে চান না। তাই তোমাদের এই পদ্ধতি জানানো হচ্ছে, যাতে তোমরা রোজার সংখ্যা পূর্ণ করতে পারো এবং আল্লাহ তোমাদের যে হেদায়াত দান করেছেন সেজন্য তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করতে ও তার স্বীকৃতি দিতে এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো’- সুরা বাকারা ১৮৫। এই কুরআনে কোনো অস্পষ্টতা নেই- হক ও বাতিল স্পষ্ট করা হয়েছে এবং এর বাইরে মানুষের জীবন পরিচালনার কোনো সুযোগ নেই।
এই সমাজে জেনা-ব্যাভিচার, নগ্নতা- বেহায়াপনা-অশ্লীলতাসহ হাজারো পাপাচারের মধ্যে নিজেকে বাঁচিয়ে চলার নামই তাকওয়া এবং যে চলতে পারে তাকেই বলে মুত্তাকি। নির্দিষ্ট পোশাক বা স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা মুত্তাকির পরিচায়ক নয়। মুত্তাকি সম্পর্কে আল্লাহর নিজেরই দেওয়া একটি পরিচয় রয়েছে- ‘তোমরা পূর্ব বা পশ্চিম দিকে মুখ ফেরাও তাতে কোনো পুণ্য নেই, বরং সৎকাজ হচ্ছে এই যে, মানুষ আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতা, আল্লাহর অবতীর্ণ কিতাব ও নবিদের মনেপ্রাণে মেনে নেবে এবং আল্লাহর ভালোবাসায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের প্রিয় ধন-সম্পদ আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতিম, মিসকিন, মুসাফির, সাহায্যপ্রার্থী ও দাসমুক্ত কাজে ব্যয় করবে। আর নামাজ কায়েম করবে এবং জাকাত আদায় করবে। যারা প্রতিশ্রুতি দিলে তা পালন করে, ক্ষুধা-দারিদ্র, বিপদে-আপদে এবং হক ও বাতিলের দ্বন্দ্ব-সংগ্রামে পরম ধৈর্য অবলম্বন করে- এরাই হচ্ছে সত্যবাদী এবং এরাই হচ্ছে প্রকৃত মুত্তাকি’- সুরা বাকারা ১৭৭।