শার্ম থেকে ফিরেও অস্বস্তি (পর্ব-৪)

মনিরুল ইসলাম , রাষ্ট্রদূত - মিশর

বিশেষ দ্রষ্টব্য
  • প্রায় ১১০০-কোটি মানবসন্তানের ভার ধরিত্রী মাতা কি বইতে পারবে? সীমাবদ্ধ সম্পদের জন্য প্রতিযোগিতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা সংঘাত তীব্রতর... আর কতদিনই বা বেঁচে থাকতে পারবে মা বসুমতী--তারও তো বয়স হয়েছে, এসেছে জরার ক্লান্তি ও বার্ধক্যের ভ্রান্তি। বুড়োরা যখন কুম্ভকর্ণের ঘুমে, শিশুরা জেগে উঠে তখন গাইবে, ‘আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে।’

জাতিসংঘের হিসেবে এ মাসের ১৫ তারিখে পৃথিবীতে জনসংখ্যা হয়েছে ৮০০-কোটি, অথচ মাত্র দেড়শ বছর আগেও ছিল একশ কোটি। ১৬০০ সালের দিকে সম্রাট আকবর-শাহজাহানের সময় পৃথিবী জুড়ে লোকসংখ্যা ছিল মাত্র ৫০-কোটি। খাদ্যনিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা ও গড়আয়ু বৃদ্ধি পাওয়ায় পৃথিবীতে মনুষ্যবৃদ্ধির হার বেড়ে গেছে। এই শতাব্দীর শেষদিকে বিশ্বজনসংখ্যা হবে প্রায় ১১০০-কোটি। এতগুলো মানবসন্তানের ভার ধরিত্রী মাতা কি বইতে পারবে? ইতোমধ্যে সীমাবদ্ধ সম্পদের জন্য প্রতিযোগিতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা সংঘাত তীব্রতর হচ্ছে।

সুতরাং বাড়বে কার্বন নিঃসরণ, তাপমাত্রা, বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, লবনাক্ততা, মরুকরণ। দোষণ দাহনে তিক্ত দগ্ধ পৃথিবীর সমুদ্র এবং জঙ্গলেও বাড়বে অস্থিরতা। কারণ জলবায়ু বা পরিবেশ পরিবর্তনে মানুষ যত দ্রুত ও সহজে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, প্রাণী-বৃক্ষ তা পারে না। নূতন বাসনির্মাণ, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও দেশান্তরে তারা পারদর্শী নয়। প্রশ্ন হয়: কোনো কোনো প্রাণী বা বৃক্ষের বিলুপ্তিতে সমস্যা কি? ধীরে ধীরে জীব-বৈচিত্র্য হ্রাস পাবে, তাতে খাদ্যচক্র ভেঙে পড়বে, অনাহারে একাধিক নির্ভরশীল প্রাণী ও বৃক্ষ বিলুপ্ত হবে। মাত্র একজীবনে, বিগত পঞ্চাশ বছরে, আমাদের চোখের সামনে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ–পশু পাখি মৎস্য বৃক্ষের কী দুরবস্থা হয়েছে দেখতে পাচ্ছি।

অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী গবেষণায় দেখিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৭০ সালের মধ্যে পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ প্রাণী ও বৃক্ষ বিলুপ্ত হতে পারে। বিগত ৫০-কোটি বৎসরে পৃথিবীতে প্রাকৃতিক কারণে পাঁচবার গণবিলুপ্তি ঘটেছিল। পরবর্তী ষষ্ঠ গণবিলুপ্তি ঘটবে মানুষের কর্মকাণ্ডে সৃষ্ট বিরূপ প্রকৃতির তাণ্ডবে। পরিশেষে আসবে মহাবিলুপ্তি, তাতে কি মানুষও অর্ন্তভুক্ত থাকবে? আর কতদিনই বা বেঁচে থাকতে পারবে মা বসুমতী–তারও তো বয়স হয়েছে, এসেছে জরার ক্লান্তি ও বার্ধক্যের ভ্রান্তি।

তাহলে? মানুষই পারে–সব পারে, পারবে নিশ্চয়। পৃথিবীর সম্পদ সসীম কিন্তু মানব মস্তিষ্কের সম্ভাবনা অসীম। পৃথিবীর মানুষকে বাঁচানোর জন্য কোভিড-১৯ প্রতিরোধে যদি এতদ্রুত দশ ট্রিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করে খরচ করা যায়, জলবায়ু বিশুদ্ধকরণে কেন এক ট্রিলিয়নও পাওয়া যায় না? হয়তো একদিন যাবে। তবে ‘দেখি কী হয়’ বলে বসে থাকার সময় শেষ হয়ে এসেছে।

বিরূপ জলবায়ু এবং দুষিত পরিবেশের ধ্বংসাত্মক প্রভাব এখন আর অদৃশ্য ধীরগতি দীর্ঘমেয়াদী নেই, প্রতিবছর প্রতিদেশে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। বুড়োরা যখন কুম্ভকর্ণের ঘুমে, শিশুরা জেগে উঠে তখন গাইবে, ‘আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে।’

সমাপ্ত…

আগের পর্ব…

শার্ম থেকে ফিরেও অস্বস্তি (পর্ব-৩)

সূত্র
ফেসবুক পোস্ট থেকে

এই বিভাগের আরো সংবাদ

Back to top button