তরুণদের উদ্দেশ্যে- “বড় হতে চাই”
বলতে পারেন- আমি দেশের প্রেসিডেন্ট হতে চাই।
সবাই বড় হতে চায়। নাম-যশ-অর্থবৃত্ত ও খ্যাতির শীর্ষে উঠতে চায়। প্রশ্ন হচ্ছে, চাইলে কি হওয়া যায়? হ্যাঁ, হওয়া যায়। না চাইলে কিছুই হওয়া যায় না। তাহলে বলতে পারেন- আমি দেশের প্রেসিডেন্ট হতে চাই।
চাওয়া মানে প্রবল ইচ্ছা। ইচ্ছাশক্তিই মানুষকে বড় হওয়ার প্রেরণা যোগায়। কেউ প্রেসিডেন্ট হতে চাইলে শুরু হয়ে যায় তার মধ্যে এক কর্মপ্রেরণা ও এগিয়ে যাওয়ার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা। প্রেসিডেন্ট হওয়ার ইচ্ছাপোষণ করলে প্রেসিডেন্ট হতে না পারলেও এমপি বা কমপক্ষে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়া যায়। আর কোনো ইচ্ছা না থাকলে ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদার হওয়াও তার পক্ষে সম্ভব নয়।
একজন বড় রাজনীতিক বা সরকারি কর্মকর্তা বা ব্যবসায়ী বা শিল্পোদ্যক্তা বা বড় মাপের একজন কৃষক হতে চাইলে তার মধ্যে সে বিষয়ে প্রবল আগ্রহ থাকতে হবে। মনের মধ্যে বড় হওয়ার প্রবল আকাঙ্ক্ষাই একজন শিক্ষার্থীকে রাতজেগে লেখাপড়ায় উদ্বুদ্ধ করে। ইচ্ছাশক্তিরই অপর নাম নিয়ত।
একজন ব্যক্তি যখন বলে এ বছর সে হজে যাওয়ার নিয়ত করেছে, এ কথা বলার সাথে সাথে হজে যাওয়ার মতো প্রস্তুতি তার মধ্যে শুরু হয়ে যায়। সকল কাজে নিয়ত বা ইচ্ছাপোষণই বড় কথা। যে কোনো নেক কাজে নিয়ত বা ইচ্ছা করলেই সওয়াব রয়েছে। এর দ্বারা ইচ্ছাশক্তির গুরুত্ব সহজেই উপলব্ধি করা যায়।
একজন শিক্ষার্থীকে তার শিক্ষক বা অভিভাবক যতই ধাক্কাতে থাকুক তার মধ্যে নিজের থেকে আগ্রহ বা বড় হওয়ার প্রেরণা জাগ্রত না হলে সেই শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যায় না। আমরা যখন কোনো অভিভাবককে বলি তাঁর ছেলে পরীক্ষায় ভালো করছে না। অভিভাবকের জবাব হয় বাসায় তার ছেলে একটুও বই নিয়ে বসে না বা পড়ায় তার কোনো মন নেই। বোঝা যায় শিক্ষক বা অভিভাবক সেই ছেলের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
প্রাথমিক বা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে শিক্ষক বা অভিভাবকের ভূমিকা যতখানি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর পক্ষে তাদের সেই ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই। Nurse the baby, protect the child and free the adult. কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা অধ্যয়নরত তারা সবাই Adult এবং তাদের অভিভাবক তারা নিজেরাই। ভালো করে মনে নেই- এমনই জানি, ‘গুরু বলে কিছু নেই, তুমিই তোমার শ্রেষ্ঠ গুরু’। খুব নামকরা কোন মনীষীর উক্তি হবে।
এ সব উক্তির সার কথা কথা হলো মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলা। নিজের উপর আস্থা বা বিশ্বাস না থাকলে লেখাপড়া, চাকুরিপ্রাপ্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য বা রাজনীতি কোনো কিছুতেই সফলকাম হওয়া যায় না।
কোনো কাজ করতে গিয়ে তাড়াতাড়ি ফল না পেয়ে হতাশ হয়ে কাজ থেকে বিরত থাকার নাম ধৈর্য নয় বরং ধৈর্য হলো হতাশ না হয়ে নিরলস প্রচেষ্টা চালানো এবং এ ব্যাপারে যারা ধৈর্যাবলম্বন করে তারাই সফলকাম হয়; কারণ তাদের ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা নিজেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন’।
তাই বড় হতে চাইলে নিজের মধ্যে লালন করা হতাশা ঝেড়ে ফেলে আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে চেষ্টা-সাধনা করে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে আল্লাহপাক কারো চেষ্টা-সাধনাকে ব্যর্থ হতে দেন না। আমাদের যুবসমাজের মধ্যে জীবনে বড় হওয়ার প্রবল আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত হোক এবং এ জাতি এক কর্মচঞ্চল যুবসমাজ পেয়ে ধন্য হোক- এই আমাদের কামনা।