বিজয়ের মাসে ফুটবলে আরেকটি জয় পেল বাংলাদেশ
প্রথমবার আয়োজিত অনূর্ধ্ব-১৯ টুর্নামেন্টে প্রথম চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
বিজয়ের মাসে ফুটবলে আরেকটি জয় পেল বাংলাদেশ। তাই তো ম্যাচ শেষে স্বাগতিক দলের ফুটবলাররা একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে উচ্ছ্বসিত। আনন্দের আত্মহারা মারিয়া মান্ডা, ঋতুপর্ণা চাকমা, শামসুন্নাহাররা। লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে গ্যালারির সামনে ল্যাপ অব অনার দিলেন তারা। ফটোগ্রাফারদের ক্লিক ক্লিক শব্দে ফ্ল্যাশ গিয়ে পড়লো মারিয়া, তহুরাদের মুখে।
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের অনূর্ধ্ব-১৮ টুর্নামেন্টের মতো প্রথমবার আয়োজিত অনূর্ধ্ব-১৯ টুর্নামেন্টেও প্রথম চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। যে কারণে আনন্দের মাত্রাটা একটু বেশি। স্টেডিয়ামের উত্তর ও দক্ষিণ গ্যালারি ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ। তিল ধরনের ঠাঁই নেই। অনেকেই বসতে না পেরে দাঁড়িয়ে খেলা দেখেছেন। ম্যাচের আগে স্টেডিয়ামে প্রবেশের জন্য গেটে ছিল লম্বা লাইন। দীর্ঘ দিন পর ফুটবল মাঠে এত দর্শক দেখা গেল। প্রায় ১৮ হাজার দর্শক খেলা দেখতে গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন।
শীতের রাতে দুই গ্যালারির দর্শকরা এক সঙ্গে মোবাইলে আলো জেলে অভয় দিলেন মারিয়াদের। সে এক অপূর্ব দৃশ্য। গ্যালারিতে উড়েছে লাল-সবুজের পতাকা। ভুভুজেলায় ফুঁ দিয়ে দর্শকরা উৎসাহ দিয়েছেন টিম বাংলাদেশকে।
ম্যাচের শুরুটা কিন্তু ভারত করেছিল আক্রমণাত্মক মেজাজে। প্রথম পাঁচ মিনিট তারা বাংলাদেশের উপর চড়াও হয়ে খেলার চেষ্টা করলেও খুব অল্প সময়েই নিজেদের গুছিয়ে নেন মারিয়া-তহুরারা। ছন্দময় ফুটবল উপহার দিয়ে তারা একের পর এক আক্রমণ শানিয়েছেন ভারতের রক্ষণদূর্গে।
নৈপূণ্য ছড়িয়ে মন মাতানো ফুটবলে সবাইকে মোহিত করেছেন তারা। ছোট ছোট পাসে, দারুণ বোঝাপড়ায় বাংলাদেশের আক্রমণগুলো ছিল অনেক গোছালো। রক্ষণভাগ থেকে শুরু করে মধ্যমাঠ ও আক্রমণভাগ-সব পজিশনেই ছিল স্বাগতিকদের দাপট। শুধু ফাইনালেই নয়, টুর্নামেন্টের সবগুলো ম্যাচেই বাংলাদেশ ছিল দুর্দান্ত। পুরো টুর্নামেন্টে ২০ গোল করে বিপরীতে একটি গোলও হজম করেনি লাল-সবুজের মেয়েরা।
ফাইনালের বেশিরভাগ সময়ই বল ভারতের সীমানায় ঘোরাফেরা করেছে। ফলে বাংলাদেশ গোলরক্ষক রুপনা চাকমাকে বড় কোনো পরীক্ষা দিতে হয়নি। আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে ম্যাচের ১৫ মিনিটে নিশ্চিত গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল বাংলাদেশ।
এসময় মাঝমাঠ খেকে মারিয়া মান্ডার শট ভারতের গোলরক্ষক আনশিকা ঠিকমতো ফেরাতে পারেননি। সামনে পড়া বল তহুরা খাতুনের পায়ে গেলে তিনি চমৎকার শট নেন। কিন্তু গোললাইন থেকে বল ফেরান ডিফেন্ডার নিরমলা দেবী। অবশ্য বল গোললাইন অতিক্রমের মূহূর্তে গোলরক্ষক আনশিকা দৌঁড়ে এসে তা নিজের গ্রিপে নেন। গোলের দাবিতে রেফারিকে ঘিরে ধরেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা। কিন্তু তাতে সাড়া দেননি নেপালের রেফারি অঞ্জনা রায়।
২২ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে একক প্রচেষ্টায় বাঁ প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে ঢুকে পড়া তহুরার বাঁ পায়ের শট পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়। মিনিট তিনেক পর আনাই মুগনির উড়ন্ত ক্রসও পোস্টে লেগে ফিরে আসে। অসংখ্য আক্রমণ করেও গোল পাচ্ছিল না স্বাগতিকরা।
অবশেষে ভাগ্যদেবী মুখ তুলে চাইলেন মারিয়াদের দিকে। ম্যাচের ৮০ মিনিটে আসে সেই মহেন্দ্রক্ষণ। এসময় ডানপ্রান্ত দিয়ে শাহেদা আক্তার রিপা ব্যাকহিল পাস দেন আনাই মুগিনীকে। রিপার পাস ধরে আনাই বক্সের বাইরে থেকে উঁচু করে শট নেন। ভারতের গোলরক্ষক আনশিকা বলের ফ্লাইট বুঝতেই পারেননি। তিনি হাত লাগালেও বল গোললাইন অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে মেতে ওঠে পুরো স্টেডিয়াম (১-০)।
বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার পর ম্যাচের বাকি সময় উৎসবমুখরই থাকে গ্যালারি।