কুরআনের পাঠ
ভুল ধারণা নিরসন লক্ষ্যে
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
নিঃসন্দেহে যারা ইমান এনেছে (মুসলিম), যারা ছিল ইহুদি, খৃষ্টান এবং সাবি- এদের (সবার মাঝে) যে কেউ আল্লাহর ওপর ইমান আনবে, ইমান আনবে পরকালের ওপর এবং নেক কাজ করবে, তাদের জন্য তাদের মালিকের কাছে পুরস্কার থাকবে এবং এসব লোকের কোনো ভয় নেই, তারা চিন্তিতও হবে না’-সুরা বাকারা ৬২।
এই আয়াতটি প্রসঙ্গে অনেকের ধারণা আখিরাতে কল্যাণ লাভের ক্ষেত্রে মুসলমান হওয়া শর্ত নয়। বরং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ইমানের সাথে কেউ নেক আমল করলে আল্লাহপাক তাকে পুরস্কৃত করবেন।
এই আয়াতটির পূর্বে ও পরে ইহুদিদের প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। ইহুদিদের বিশ্বাস, তারা আল্লাহর অত্যন্ত প্রিয়ভাজন এবং আখেরাতে কেবল তারাই নাজাতপ্রাপ্ত হবে। বাকি সবাই জাহান্নামে যাবে। আসলে তাদের এই ধারণারই প্রতিবাদ করা হয়েছে। বর্তমানে মুসলমানদেরও এমনি বিশ্বাস যে মুহাম্মদ সা.-এর উম্মত হিসেবে তারা নাজাত পাবে, তাদের আমল-আখলাক যতো কদর্যই হোক না কেন? আসলে বিষয়টি তা নয়। দুনিয়ার আদমশুমারিতে যে পরিচয় সেটি আসল পরিচয় নয়। আল্লাহর একটি দপ্তর রয়েছে। কে মুসলমান ও কে কাফের সেটি লিপিবদ্ধ হয় ইমান ও আমলের ভিত্তিতে। মুসলমান সেই যে আল্লাহর অনুগত (বিনা দ্বিধায় আল্লাহর হুকুম মেনে চলে। অর্থাৎ বলে, শুনলাম ও মেনে নিলাম)।
এখানে মুসলমান, ইহুদি, খৃষ্টান ও সাবিদের উল্লেখ করে বলা হয়েছে আল্লাহর কাছে স্রেফ দলপ্রীতি ও গোত্রপ্রীতির কোনো মূল্য নেই, মূল্য বহন করে ইমান ও নেক আমলের। সকল জনপদে আল্লাহপাক নবি ও রসুল প্রেরণ করেছেন এবং সমসাময়িক রসুলের প্রতি ইমান আনয়ন করে যারা ইমানের দাবী অনুসারে নেক আমল করেছে তারাই সফলকাম (মুসলিম)। দুর্ভাগ্য, নবিদের অবর্তমানে মানুষ দ্রুতই তাঁদের শিক্ষা থেকে গাফেল হয়ে কুফুরি শুরু করে দেয়। তখন আল্লাহ তাঁর বান্দাদের হেদায়াতের জন্য নতুন রসুল প্রেরণ করেন এবং সাথে সাথে পূর্ববর্তী রসুলের শিক্ষা রহিত করে দেন। এভাবে সর্বশেষ রসুলের আগমনের মাধ্যমে পূর্ববর্তী সকল নবির শিক্ষা রহিত করে হেদায়াতের জন্য সর্বশেষ কিতাব আল কুরআন ও সর্বশেষ নবি মুহাম্মদ সা.-কে মেনে চলাকে আল্লাহপাক অপরিহার্য করে দিয়েছেন।
আমরা রসুলদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করি না। সকলেই আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত এবং সকলের দ্বীন এক (ইসলাম)। দুর্ভাগ্য, মানুষ তাদের দ্বীনে নানাকিছু মিশ্রণ ঘটিয়েছে। তাই এতো পার্থক্য। শিরক মূলোৎপাটন করার জন্যই নবিদের আগমন, অথচ তাঁদের অনুসারীরা নবি-রসুলদেরকে কেন্দ্র করেই শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। অতীতের সকল শরীয়ত বাতিল করে মুহাম্মদ সা.-এর শরিয়তকে অবিকৃত করে রাখার ব্যবস্থা আল্লাহ নিজেই করেছেন। এই সুরার শুরুতে কুরআনকে মুত্তাকিদের জন্য পথপ্রদর্শক আবার রমজানে (বাকারা ১৮৫) কুরআন নাজিল প্রসঙ্গে মানব জাতির জন্য হেদায়াত হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। মুহাম্মদ সা.-এর ওপর সর্বশেষ অবতীর্ণ আয়াতে (মায়েদা ৩ নং) বলা হয়েছে নেয়ামত পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং দ্বীন হিসেবে ইসলামকে মনোনীত করলাম।
সর্বশেষ নবি হিসেবে মুহাম্মদ সা.-এর আগমনের পরে আর কোনো নবির শরিয়ত কার্যকর নেই এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে গৃহিতও হবে না। এ প্রসঙ্গে কুরআন ও হাদিসে অসংখ্য আয়াত রয়েছে। মহাম্মদ সা.-কে শুধু নবি নন সর্বশেষ নবি এবং কুরআনকে কেবল আল্লাহর কিতাব নয় সর্বশেষ আসমানি কিতাব হিসেবে মানতে হবে। এর অন্যথা হলে সে আর মুসলিম থাকে না এবং আখিরাতে নাজাতেরও কোনো সম্ভাবনা নেই।
আল্লাহপাক তাঁর বান্দাদের কোনো আমল বিনষ্ট করেন না। ইমান ছাড়া নেক আমলের বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ায় কিছুটা দান করেন এবং ইমানসহ নেক আমলের পুরস্কার দুনিয়া ও আখিরাতে দান করবেন। আল্লাহপাক আমাদেরকে একনিষ্ঠভাবে ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে মেনে চলার তৌফিক দান করুন। আমিন।