শার্ম থেকে ফিরেও অস্বস্তি (পর্ব-১)

মনিরুল ইসলাম , রাষ্ট্রদূত - মিশর

বিশেষ দ্রষ্টব্য
  • মানুষ চাইলে বালুতেও আলু ফলাতে পারে, আঁধারে আনে আলো। বুদ্ধিমান বেনিয়ারা বড়বুলি আওড়িয়ে অস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দেয়, সত্যকে এড়িয়ে যায়, পাল্টা যুক্তি দাঁড় করায়। বিজ্ঞানীদের তথ্যসত্য, সুশীলসমাজের সুপারিশ ও ভোক্তভোগীদের চিৎকার তলিয়ে যায় অতিধনীদের শক্ত মুঠোয়। বৈজ্ঞানিক নেতৃত্ব যত শক্ত পোক্ত অভিজ্ঞ হচ্ছে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব ততই দোদুল্যমান ও সুবিধাবাদী হচ্ছে। দরকার জনতার সর্তকতা, অবহিতকরণ--মানবতার জাগরণ।
এশিয়া-আফ্রিকার মাঝখানে শায়িত সিনাই উপদ্বীপ, পূর্বকোল ধরে লোহিত সাগর, তীর ঘেঁষে ‘শার্ম এল-শেখ’ নামক স্বপ্নিল শহর। নভেম্বর ৬-১৮, ২০২২ সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের উপর কপ-২৭ সম্মেলন উপলক্ষে এই মরুশহরে এসে বসেছিল পৃথিবীর প্রায় সবগুলো দেশের পঞ্চাশ হাজার মানুষ। এপারে মিসর, ওপারে সৌদি আরব–চারদিকে মরুবালি কিন্তু মানুষ চাইলে বালুতেও আলু ফলাতে পারে, আঁধারে আনে আলো। আবার উল্টোও করতে পারে, পারে না?
সবার মতো আমিও শার্মের হলিডে রিসোর্ট থেকে ফিরে এসেছি নিজ গৃহকোণে কিন্তু স্বস্তি পাচ্ছি না। এই ‘নিজস্ব নীড়’ কতখানি নিরাপদ নিশ্চিত করে এলাম, সেই হিসেব করতে বসে মন খারাপ হয়ে গেল। দিনরাত কঠিন বাদানুবাদের পর আউট-কাম কি হল:
১. দীর্ঘদিন ধরে কার্বন নিঃসরণকারী ধনী দেশগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র দেশগুলোকে ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিলে’র মাধ্যমে অবকাঠামো নির্মাণে ৩৪০ মিলিয়ন ইউরো সাহায্য দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
২. বিশ্বব্যাঙ্ক-সহ বহুজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ সংস্কারের কথা বলা হয়েছে, যাতে গরিব দেশগুলো ক্লীন এনার্জিতে বিনিয়োগ পায়।
৩. জি৭ কর্তৃক ‘গ্লোবাল শীল্ড’ গঠন, যার মাধ্যমে বাংলাদেশসহ জলবায়ুতে ক্ষতিগ্রস্ত ৫৮-টি গরিব দেশকে আর্থিক সাহায্য দেয়া হবে।
১৯৯২ সালের রিও সম্মেলনে উত্থাপিত ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য ক্ষয়ক্ষতি-ফান্ড গঠনে ধনী দেশগুলো এতদিন পর রাজি হলেও কিভাবে, কোথা থেকে, কার জন্য, কতটুকু অর্থ আসবে সেসবের কোনো রূপরেখা নেই। বুদ্ধিমান বেনিয়ারা বড়বুলি আওড়িয়ে অস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দেয়, সত্যকে এড়িয়ে যায়, পাল্টা যুক্তি দাঁড় করায়। বিজ্ঞানীদের তথ্যসত্য, সুশীলসমাজের সুপারিশ ও ভোক্তভোগীদের চিৎকার তলিয়ে যায় অতিধনীদের শক্ত মুঠোয়। ফলাফল দাঁড়ায় সিদ্ধান্তহীনতা, ফাঁকতালি, শেষমুহূর্তের গুঁজামিল।
আগামী বছর কপ-২৮ সম্মেলনে কি আরেকটু বেশি আশা করা যায়? উহুঁ। কারণ সেটি হোস্ট করবে তৈলসমৃদ্ধ আরব জাহনের আরেক মায়াবী শহর–দুবাই, যাদের জাতীয় আয়ের উৎসই হল তৈল গ্যাস ও বাণিজ্য। আয়রনি হলো, বৈজ্ঞানিক নেতৃত্ব যত শক্ত পোক্ত অভিজ্ঞ হচ্ছে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব ততই দোদুল্যমান ও সুবিধাবাদী হচ্ছে। দরকার জনতার সর্তকতা, অবহিতকরণ–মানবতার জাগরণ।
(চলবে..)
সূত্র
ফেইসবুক পোস্ট থেকে

এই বিভাগের আরো সংবাদ

Back to top button